করোনা সংকট কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রস্তুতি শুরু ইউরোপে। তবে এখনো ভয়াবহ পরিস্থিতি আমেরিকায়।
চারটি সংখ্যা। তিনটি আশঙ্কার, একটি সামান্য হলেও আশার আলো দেখায়। বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রকোপে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেল ২০ লাখের আশপাশে। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ১০ হাজার। গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার জনের।
আর আশার কথা, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাড়ে চার লাখ। আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। কীভাবে বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনের দিকে এগোবে মঙ্গলবার তার গাইড লাইন স্থির করে দেওয়ার কথা তাদের। তবে জার্মানি আগামী ১৯ এপ্রিলের পরে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে।
ইউরোপ যখন করোনা সংকটক্রমশ কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিকল্পনা শুরু করেছে, আমেরিকার অবস্থা তখনও ভয়াবহ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি লোকের। শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কেই মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিনের মতো সোমবারেও সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এবং প্রতিদিনের মতোই বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।
গত কয়েক দিন ধরে ট্রাম্প বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, ঠিক সময়েই করোনা সংকটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। যদিও দেশের গণমাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিযোগ, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পরে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তার আগে করোনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না তিনি।
সোমবার কার্যত নির্বাচনী প্রচারের কায়দায় ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে ট্রাম্প প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, কত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। রোববার দেশের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও অভিযোগ করেছিলেন, ট্রাম্প ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছেন। যার জেরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও স্বভাবসুলভ হুমকি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট।
সোমবার অবশ্য প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে সরানোর প্রশ্ন উঠছে না।
এ দিকে জার্মান প্রশাসন মনে করছে তারা করোনা সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। জার্মানির বিশেষজ্ঞরা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে আগামী ১৯ এপ্রিলের পরে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলা যেতে পারে। খোলা যেতে পারে স্কুল, কলেজ, অফিস, রেস্তোরাঁ। তবে সবটাই ধীরে সুস্থে করা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে কি না, সে দিকেও নজর রাখা হবে।
মঙ্গলবারই নতুন অ্যাডভাইসারি জারি করতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। লকডাউনে থাকা দেশগুলি কীভাবে একে একে নিষেধাজ্ঞা তুলবে, কোন কোন দিকে নজর রাখতে হবে, সে বিষয়েই বিশদে জানানোর কথা তাদের।
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রকোপ এখন আয়ত্তের মধ্যে। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের একটি কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। টেস্ট হচ্ছে। রোগীদের আইসোলেশনে রেখে সুস্থ করাও সম্ভব হচ্ছে। আরও একটি জরুরি কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য নতুন জীবনযাপনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে।
এ দিকে এরই মধ্যে চীন জানিয়েছে, চলতি মাসেই করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক ভাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করতে পারে তারা। এ বিষয়ে দেশের সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত মিলেছে। বেজিংয়ের একটি সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। পরীক্ষা সফল হলে এটাই হবে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন। ডয়চে ভেলে।