1. kaium.hrd@gmail.com : ময়মনসিংহের কাগজ প্রতিবেদক :
  2. editor@amadergouripur.com : Al Imran :
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ময়মনসিংহে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশী অস্ত্রসহ মাদক উদ্ধার গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলা, ২৪ ঘন্টায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইন ছাত্র ফোরাম ময়মনসিংহ জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা।। আহ্বায়ক ফরহাদ, সদস্য সচিব রবিন শেখ হাসিনার শেষ ৫ বছরে ১৬ হাজারের বেশি খুন গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-আমিন, সম্পাদক বিপ্লব ময়মনসিংহে ট্রাক সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষ, চালক নিহত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শিমুর বিরুদ্ধে মামলা গৌরীপুরে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ খ্যাত সেই শ্যামল গ্রেফতার জুলাই বিপ্লবের কন্যাদের গল্প শুনলেন ড. ইউনূস

ভেন্টিলেটার বন্ধ করার ৫ মিনিটের মধ্যে রোগীর মৃত্যু

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০
  • ৩০৩ Time View

কোভিড নাইনটিনে আক্রান্ত সঙ্কটজনক অবস্থার রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটারের ভূমিকা বিশাল। ভেন্টিলেটার থাকার ওপর অনেক সময় ওই রোগীর জীবন মৃত্যু নির্ভর করে।

ভেন্টিলেটার তাদের ফুসফুসে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন জোগায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে আনে অর্থাৎ রোগী যখন নিজে নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে না, তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস নেওয়ায় ভেন্টিলেটার।

কিন্তু এই ভেন্টিলেটারে দেয়ার মানে এই নয় যে এতে সব রোগীর জীবন বাঁচবে। এ কারণেই এখানে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত নেবার বিষয় থাকে যে কখন তারা মনে করবেন সেই রোগীর আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই, এবং ভেন্টিলেটার চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে হবে।

“ভেন্টিলেটার বন্ধ করে দেয়াটা খুবই মানসিক চাপের এবং কষ্টের মুহূর্ত। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওই ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী,” বলছেন জুয়ানিতা নিত্তলা।

লন্ডনের রয়াল ফ্রি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রধান নার্স তিনি।

দক্ষিণ ভারতে জন্ম নিত্তলা ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় (এনএইচএস) কাজ করছেন গত ১৬ বছর ধরে। তিনি নিবিড় পরিচর্যা সেবায় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নার্স।

“ভেন্টিলেশন বন্ধ করাটাই আমার কাজ,” বিবিসিকে বলছিলেন ৪২ বছরের এই নার্স।

শেষ ইচ্ছা
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক সকালে নিত্তলা যখন তার শিফটে যোগ দিলেন নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) -এর ডাক্তার তাকে বললেন কোভিড -১৯-এর একজন রোগীর চিকিৎসা তাকে বন্ধ করে দিতে হবে।

রোগী ছিলেন পেশায় একজন কমিউনিটি নার্স – ৫০এর কোঠায় বয়স। নিত্তলা তার মেয়েকে জানালেন গোটা প্রক্রিয়া সম্পর্কে।

“আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম তার মায়ের কোন কষ্ট হচ্ছে না। তিনি খুব প্রশান্তির মধ্যে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম তার মায়ের কোন শেষ ইচ্ছা আছে কি না এবং ধর্মীয়ভাবে তিনি কিছু চান কিনা।”

আইসিইউ-তে বিছানাগুলো পাশাপাশি। নিত্তলার চারপাশে যত রোগীর তিনি দেখাশোনা করছেন তারা সবাই অচেতন।

“সব রোগীই গুরুতর অসুস্থ। আমি ওই রোগীর চারপাশ পর্দা দিয়ে ঘিরে দিলাম। এবং সবরকম অ্যালার্ম বা সতর্কসঙ্কেত বন্ধ করে দিলাম।”

সব চিকিৎসা কর্মী কয়েক মুহূর্তের জন্য কাজ বন্ধ রাখলেন।

“নার্সরা কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। রোগীর সম্মান এবং তাকে স্বস্তি দেওয়াটাই তখন আমাদের অগ্রাধিকার,” বললেন নিত্তলা।

নিত্তলা রোগীর কানের কাছে ফোন ধরলেন এবং তার মেয়েকে বললেন “কথা বলুন”।

“আমার কাছে ওটা একটা ফোন কল মাত্র। কিন্তু তার পরিবারের জন্য ওটা ছিল বিশাল পাওয়া। ওরা চেয়েছিলেন ভিডিও কল করতে। কিন্তু দুভার্গ্যবশত আইসিইউ-র ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই।”

মেশিন বন্ধ
রোগীর পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী, নিত্তলা কমপিউটার থেকে একটা নির্দিষ্ট মিউজিক ভিডিও বাজালেন। এরপর তিনি গিয়ে ভেন্টিলেটারের সুইচটা বন্ধ করে দিলেন।

“আমি তার পাশে বসলাম, যতক্ষণ না প্রাণবায়ু বেরলো আমি তার হাত ধরে পাশে বসে রইলাম।”

নিঃশ্বাস নেবার জন্য সবরকম সহায়তা সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন শুধু ডাক্তাররা এবং সেটা তারা নেন খুবই সতর্কতার সঙ্গে সব দিক বিবেচনা করে, যেমন রোগীর বয়স, তার আর কোন অসুখ আছে কি না, তিনি চিকিৎসায় কেমন সাড়া দিচ্ছেন, তার সেরে ওঠার সম্ভাবনা কতটা, সবদিক বিশ্লেষণ করে।

ভেন্টিলেটার যন্ত্র বন্ধ করে দেবার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওই রোগী মারা গেলেন।

“আমি মনিটারে দেখলাম আলো ফ্লাশ করছে এবং মনিটারের পর্দায় হৃদস্পন্দন থেমে যাবার যান্ত্রিক সঙ্কেত।”

একাকী মৃত্যু
তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য নলের মাধ্যমে যেসব ওষুধ দেয়া হচ্ছিল সেসব নল খুলে দিলেন নিত্তলা।

রোগীর মেয়ে যেহেতু জানতেন না যে কী হচ্ছে, তিনি তখনও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছিলেন। তিনি ফোনে তাকে কিছু প্রার্থনার কথা শোনাচ্ছিলেন।

নিত্তলার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাকে বলতে, কিন্তু তারপরেও ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে তাকে বলতে হল তার মা মারা গেছেন।

একজন নার্স হিসাবে, তিনি বলছেন , একজন রোগী মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

“একজন সহকর্মীর সাহায্য নিয়ে আমি তাকে পরিষ্কার করলাম, সাদা কাপড়ে মুড়ে তার লাশ বডি ব্যাগে ঢোকালাম আর ব্যাগ বন্ধ করার আগে আমি রোগীর কপালে ক্রশ চিহ্ন এঁকে দিলাম ধর্মীয় রীতি মেনে, ” বিবিসিকে বলছিলেন নিত্তলা।

করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের আগে কোন রোগীর চিকিৎসা বন্ধের আগে ডাক্তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেন।

কৃত্রিম শ্বাসব্যবস্থার যন্ত্র বন্ধ করে দেবার আগে নিকট আত্মীয়দের আইসিইউ-তে ঢুকতে দেয়া হতো। এখন করোনাভাইরাস থেকে সংক্রমণের আশংকায় বিশ্বের বহু দেশে এটা বন্ধ হয়ে গেছে।

“একাকী এভাবে মারা যাওয়াটা গভীর দু:খের,” নিত্তলা বলছিলেন। তিনি বলছেন যারা মৃত্যু পথযাত্রী তাদের সাহায্য করতে পারার মধ্যে দিয়ে মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা তিনি করছেন।

তিনি এমন রোগী দেখেছেন যারা শ্বাস নিতে পারছেন না, যাদের দম আটকে যাচ্ছে- “এটা চোখে দেখা খুবই কষ্টের।”

বিছানা নেই
হাসপাতালগুলোতে এত মানুষ ভর্তি হচ্ছে যে হাসপাতালগুলোতে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের বিছানা দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। সব বিছানা রোগীতে ভর্তি।

আমাদের হাসপাতালে আইসিইউতে বিছানা ছিল ৩৪, এখন ৬০। ১৭৫ জন নার্স দিবারাত্র শিফটে ডিউটি করছে।

“সাধারণ সময়ে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে প্রতি রোগীর জন্য একজন করে নার্স দায়িত্বে থাকে। এখন একজন নার্স তিনজন রোগীকে দেখছে। অবস্থা আরও খারাপ হলে একজন নার্সকে ছয়জন করে রোগীর দেখভাল করতে হবে।”

তার টিমের কয়েকজন নার্সের উপসর্গ ধরা পড়েছে। তারা স্বেচ্ছা আইসোলেশনে আছে। হাসপাতাল অন্য নার্সদের দ্রুত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে তারা প্রয়োজনে হাল ধরতে পারে ।

“শিফট শুরু করার আগে আমরা সবাই পরস্পরের হাত ধরে বলি ‘নিরাপদে থেকো’। আমরা অন্যদের চোখে চোখে রাখি।আমরা খেয়াল রাখি সবাই গ্লাভস, মাস্ক এবং ঠিকমত পিপিই পরছে কি না,” নিত্তলা বলেন।

ভেন্টিলেটার, পাম্প, অক্সিজেন সিলিন্ডার অনেক ওষুধ সবকিছুরই অভাব এখন। তবে তার হাসপাতালে পুরো টিমের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই আছে।

“প্রতিদিন আইসিইউ-তে একজন করে মারা যাচ্ছে। মহামারির আগের চেয়ে এ সংখ্যা অনেক বেশি,” জানালেন নিত্তলা।

নার্স টিমের প্রধান হওয়ার কারণে তিনি অনেক সময় তার ভয় চেপে রাখেন।

“রাতের বেলা আতঙ্ক আমায় গ্রাস করে। আমি ঘুমতে পারি না। খালি মনে হয় আমি ভাইরাস আক্রান্ত হবো। আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি । সবাই ভয়ে আছে।”

গত বছর তার যক্ষ্মা ধরা পড়েছিল। অনেক দিন কাজে যেতে পারেননি। তিনি জানেন তার ফুসফুসের জোর কম।

“সবাই বলছে তুমি কাজে যেও না। কিন্তু এখন মহামারি চলছে। সব ভাবনা সরিয়ে রেখে কাজ করছি।”

“প্রত্যেকদিন শিফট শেষে আমার পরিচর্যায় থেকে যারা মারা গেলেন তাদের কথা ভাবি। কিন্তু চেষ্টা করি হাসপাতালের বাইরে পা রাখার পর সব চিন্তা, যতটা পারি মাথা থেকে সরিয়ে দিতে।”
সূত্র : বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© Designed and developed by Mymensinghitpark