করোনা সংক্রমন থেকে নিজেকে ও অপরকে রক্ষায় স্বাক্ষ্য নির্দেশনা মেনে চলার জন্য দেশের সর্বস্তরেরর মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সংসদের বৈঠকে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, দেশ যাতে দুর্ভিক্ষের কবলে না পড়ে তার জন্য আগাম তিনবছর অর্থনীতিতে গতিশীল রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।এক কোটি রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আমি আহবান করবো, স্বাস্থ্য সম্পর্কে যে সচেতনার নির্দেশনাগুলো বার বার ঘোষনা করা হচ্ছে সেগুলো সবাই দয়া করে মেনে চলবেন। নিজেই যেমন সুরক্ষিত থাকতে পারবেন, অপরকেও সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
তিনি বলেন, আর সকলে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। কাবা শরীফ এবং মদীনা শরীফেও সেখানে কারফিউ দেয়া হয়েছে সেখানে মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহ সে দোয়া মানবেন। আল্লাহর শক্তি যে সবচেয়ে বড় শক্তি সেটাতো আমরা করোনা ভাইরাসের শক্তি দেখেই বুঝতে পারি। এতো অস্ত্র, গোলা বারুদ কিছুই কাজে লাগেনি।
স্পিকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৫টা থেকে ৬টা ২৬মিনিট পর্যন্ত চলে অধিবেশনটি। এতে মুলত: পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং সর্বশেষ অধিবেশন সমাপ্তির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। শামসুর রহমান শরীফের স্মৃতিচারনের পরই আধাঘন্টার বক্তব্যে শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতি নিয়েই কথা বলেন। তিনি অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সরকারের প্রনোদনা প্যাকেজ এবং গরীব মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার বিষয় তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা পারদর্শি কিন্ত করোনা ভাইরাসের মতো একটা অদ্ভূত বিষয়, সত্যি কথা বলতে গেলে এই অভিজ্ঞতা সারাবিশ্বে কারো নেই।যদি একটি তুলনা করেন তাহলে বাংলাদেশ অন্য দেশ থেকে যেখানে হাজার হাজার মানুষ দৈনিক মারা যাচ্ছে আমরা অনেকটা ভালো আছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনা আসার সম্ভান পেয়েই আমরা নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর যথাযথ কাজ করছে। করোনা চিকিৎসা সরকারিভাবে করা হচ্ছে।দেশের সব জায়গায় এখন করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ৯২ হাজার পরীক্ষার কীট সগ্রহ করেছি। এরমধ্যে ২০হাজার বিতরণ করা হয়েছে এবং ৭২ হাজারের মতো মজুত রাখা হয়েছে। কীট সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড়-ঝাপটা দুর্যোগতো আসবেই এবং আসে।এ সময় হতাশ হওয়া বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাহসের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা যে যে অবস্থায় আছি সে অবস্থায় থেকে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। সেই প্রস্তুতি আমাদের থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মানুষ সাহসী হতে হতে বেশি সাহসী গেছে। বলা হয় আপনারা ঘরে থাকেন, ঘরে না থেকে বউ নিয়ে শুশুর বাড়ী বেড়াতে চলে যান শিবচর।নারায়নগঞ্জ থেকে চলে কোথায় সে বরগুনা পর্যন্ত। আমরা বার বার অনুরোধ করছি, আপনারা যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। এটাকে যদি আমরা একটা জায়গায় ধরে রাখতে পারি এবং ওখান থেকেই যদি সুস্থ্য রাখতে পারি তাহলে এটা বিস্তার লাভ করেনা। কেনো জানি মানুষ এটা মানতেই চায় না।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যে দুর্ভিক্ষের আশংকা তাতে আমাদের দেশের মানুষ যাতে দুর্ভিক্ষের কবলে না পড়ে সেটা মাথায় রেখে আগাম তিনবছর পর্যন্ত কিভাবেএই অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা যায় সে দিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা ব্যবস্থা করছি।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ১০টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছি। আমাদের ভিজিএফ, ভিজিডিসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্ড দেওয়া আছে ৫০ লাখ। এর বাইরে আরও ৫০ লাখ কার্ড এরইমধ্যে করতে বলা হয়েছে। আর ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন হটলাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যখন কেউ সহযোগিতা চাইবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের যেন সহযোগিতা পাঠানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন ধান কাটার মৌসুম। আমাদের দিনমজুর যারা কাজ পাচ্ছেন না তাদের জন্য একটু সুযোগ। তারা অনেকেই ধান কাটতে যেতে পারেন বা সকলেরই যাওয়া উচিত।আমাদের ছাত্র-শিক্ষক, বিশেষ করে ছাত্রদের বলবো তারাও যেন এগিয়ে আসে। ধানগুলো যদি ভালোভাবে তুলতে পারি আমাদের খাদ্যের অভাব হবে না।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প যেগুলো এখনই না করলেই চলে সেসব প্রকল্পের অর্থগুলো সাশ্র করার উদ্যোগ নিয়েছি।