নড়াইল শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রূপগঞ্জ এলাকায় চিত্রা নদীতে টিসিবি’র (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) সয়াবিন তেলের শতাধিক খালি বোতল ভাসতে দেখা গেছে! প্রশাসন এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারলেও বিভিন্ন মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকজন মাঝিসহ স্থানীয়রা জানান, টিসিবি’র সিলযুক্ত সয়াবিন তেলের শতাধিক খালি বোতল গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর নড়াইলের রূপগঞ্জ এলাকায় চিত্রা নদীতে ভাসতে দেখা যায়। এ অবস্থায় রূপগঞ্জ-পংকবিলা খেয়াঘাটের কয়েকজন মাঝি বেশ কিছু খালি বোতল উদ্ধার করে নৌকায় উঠান। এর মধ্যে দুই ও পাঁচ লিটারের বোতল রয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, অবৈধ সুবিধা নিতে এসব বোতল থেকে তেল ঢেলে রেখে খালি বোতলগুলো পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে নড়াইল সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন পিপিএম জানান, বিষয়টি তার জানা নেই।
নড়াইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) জাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে। তবে কে বা কারা, কোন এলাকা থেকে এ ধরণের কাজ করেছে তা এ মুহূর্তে শনাক্ত করা বেশ কঠিন। আমরা পর্যবেক্ষণে আছি।
এদিকে নড়াইলের রূপগঞ্জে টিসিবি’র ডিলার পরিতোষ কুন্ডু (৬৫) সয়াবিন তেল অবৈধভাবে বিক্রি করার অপরাধে ১৬ এপ্রিল দুপুরে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় চার দোকানির কাছ থেকে টিসিবি’র ৬৭ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এ তেল তারা টিসিবি’র ডিলার পরিতোষ কুন্ডুর কাছ থেকে কেনেন।
এ ঘটনায় ডিলার পরিতোষ কুন্ডুকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা এবং খুচরা পর্যায়ের চার দোকানিকে আড়াই হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরিতোষ কুন্ডু কারাগারে থাকায় তার ছেলে আকাশ কুন্ডু জরিমানার ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কারণ এর আগে ১৪ এপ্রিল দুপুরে টিসিবির ১৮ বস্তা চিনি (বস্তাপ্রতি ৫০ কেজি) এবং ২৪ বস্তা ছোলা (বস্তাপ্রতি ২৫ কেজি) অবৈধভাবে বেচাকেনা ও মজুদ রাখার অভিযোগে ডিলার পরিতোষ কুন্ডুসহ এক দোকানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে সয়াবিন তেল অবৈধভাবে বেচা-কেনার ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে শনিবার (১৮ এপ্রিল) রাত থেকে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত পৃথক অভিযানে কালোবাজারে বিক্রি হওয়া ৮৭ লিটার টিসিবি’র তেল এবং ৫০ কেজি চিনিসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কালিয়া থানায় পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কালিয়া উপজেলার সাতবাড়িয়া বাজারের রুবেল ফরাজির দোকান থেকে ৮০ লিটার এবং পাটেশ্বরী বাজারের আকরামুল শেখের দোকান থেকে সাত লিটার টিসিবি’র সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। পরে রুবেল ও আকরামুলকে আটক করে পুলিশ।
এছাড়া কালিয়ার জামরিলডাঙ্গা বাজারের তৌহিদ ইসলামের দোকান থেকে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চিনি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় আটক হন তৌহিদ। এরপর টিসিবি’র পণ্য বিক্রেতা পেড়লি বাজারের সুভাষ সাহাকে আটক করে পুলিশ।
সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়া সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, টিসিবি’র পণ্য কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।