করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দীর্ঘ সময় পৃথিবীর মানুষকে লড়াই করতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস। তিনি মন্তব্য করেছেন, এই রোগটি ‘দীর্ঘ সময় আমাদের সাথে থাকবে।’
আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য অ্যামেরিকা এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকায় কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকার বিষয়ে সতর্কও করেছেন তিনি।
তিনি সতর্ক করেছেন, লকডাউন প্রত্যাহার করে নিলে সংক্রমণ আবারো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বকে সঠিক সময়ই এই মহামারি সম্পর্কে অবগত করতে পেরেছে বলে মনে করেন তিনি।
জেনেভায় দৈনিক সংবাদ সম্মেলনের সময় তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা ঠিক সময়েই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলাম।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ৩০ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে এবং ১১ মার্চ মহামারি ঘোষণা করা হয়।
তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি সামাল দেয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেয়া পদক্ষেপগুলোকে অনেক দেশের সরকার সাধুবাদ জানালেও অনেকেই তাদের সমালোচনাও করেছে – বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস মন্তব্য করেছেন যে পশ্চিম ইউরোপসহ বেশকিছু অঞ্চলে ভাইরাস প্রাদুর্ভাব স্থিতিশীল হলেও, অর্থাৎ সংক্রমণের হার পড়তির দিকে হলেও অনেক দেশেই সংক্রমণ মাত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে যেসব দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল, সেসব দেশের কয়েকটিতে এখন নতুন করে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’
‘আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, এই ভাইরাস দীর্ঘসময় থাকবে আমাদের সাথে।’
তিনি বলেন, ‘ঘরে থাকার আদেশ এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করার জন্য নেয়া পদক্ষেপের কারণেই সংক্রমণের হার কমে গেছে। কিন্তু ভাইরাস এই এখনো যথেষ্ট ভয়াবহ।’
‘শুরুর দিকে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই ঝুঁকিতে রয়েছে, অর্থাৎ মহামারি আবারো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’
‘এখন কোনো পদক্ষেপে সন্তুষ্টি অর্জন করাটাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কী সমালোচনা হয়েছে?
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে টাকা দেয়া স্থগিত করে দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযোগ তোলেন যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার পরিচয় দিয়েছে এবং তথ্য গোপন করার চেষ্টা করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে এই প্রথমবার তাদের কার্যক্রমের জন্য সমালোচনার মুখে পড়লো, তা নয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তাইওয়ানের নেয়া পদক্ষেপ প্রকাশ না করায় মার্চে অভিযোগ ওঠে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের প্রতি পক্ষপাতী।
অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন মাস্ক পরা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি সময়মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়নি।’
‘নিয়ন্ত্রত সংস্থা হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও পরিষ্কারভাবে ব্যর্থ হয়েছে। স্বচ্ছতা ও সঠিক পদক্ষেপ নেয়া জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
সূত্র : বিবিসি