ইরানি গানবোট যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নৌযানকে হয়রানি করে, তাহলে সেসব গানবোটকে গুলি করে ধ্বংস করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে এক টুইটে জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এ নির্দেশের বিরুদ্ধে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ট্রাম্পের ওই টুইটকে ‘বৈধ আদেশ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিলেও প্রেসিডেন্টের নির্দেশনার পর ইরানি নৌযানগুলোর মুখোমুখি হলে মার্কিন সেনাদের আচরণে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তা খোলাসা করেননি। টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সমুদ্রে এক বা একাধিক ইরানি গানবোট যদি আমাদের জাহাজকে হয়রানি করে, তাহলে সেগুলোকে গুলি করে ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে থনির্দেশ দিয়েছি আমি।
উত্তর আরব সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের পাশ দিয়ে যাওয়া ইরানি নৌযানের ‘বিপজ্জনক ও হয়রানিমূলক’ আচরণের একটি ভিডিও কয়েক দিন আগে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী। ইরানি পতাকাবাহী ওই নৌযানগুলোর মধ্যে একটি মার্কিন এক যুদ্ধজাহাজের ১০ গজের মধ্যে চলে এসেছিল বলেও দাবি করে তারা।
ভিডিওতে ইরানি নৌযানগুলোর সামনের দিকে বন্দুক হাতে একাধিক মানুষকে দেখা গেছে। তবে ওই বন্দুকগুলো মার্কিন যুদ্ধজাহাজের দিকে তাক করা ছিল না; ইরানি নৌযানগুলো কাছাকাছি আসার সময় মার্কিন যুদ্ধজাহাজটিকে বেশ কয়েকবার হর্ন বাজাতেও দেখা গেছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই ট্রাম্প হয়রানি করলে ইরানি গানবোটে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্টের এ নির্দেশনার পর যুক্তরাষ্ট্রের উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডেভিড নরকুয়িস্ট মার্কিন নৌযানগুলোর ‘আত্মরক্ষার অধিকার আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরানিদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ এক সতর্কবার্তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি যে বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন, তা হচ্ছে- আমাদের সব নৌযানেরই আত্মরক্ষার অধিকার আছে। যারা আমাদের মুখোমুখি হতে চায়, তাদের আমাদের আত্মরক্ষার সহজাত অধিকারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে ।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল জন হাইটেন বলেছেন, কমান্ডার ইন চিফের (প্রেসিডেন্ট) দিক থেকে যে বৈধ আদেশগুলো এসেছে সামরিক বাহিনী তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করবে।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আর কোনো নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় প্রেসিডেন্টের বার্তা একেবারেই সুস্পষ্ট এবং আমাদের আর কিছু করার দরকার নেই,’।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের নির্দেশে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলেমানিকে হত্যার পর থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরান কিংবা এর ঘনিষ্ঠবাহিনীগুলো ইরাকে মার্কিন বাহিনী বা এর সম্পদের ওপর আক্রমণ করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এ সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে বলে চলতি মাসে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন। এ ধরনের কিছু হলে ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছিলেন তিনি।
রোববার এক বিবৃতিতে ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী উত্তর আরব সাগরে ‘একটি ঘটনা ঘটেছিল’ বলে স্বীকার করলেও মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে হয়রানি করার পেন্টাগনের ভাষ্যকে ‘ভুয়া হলিউডি গালগল্প’ হিসেবে অভিহিত করেছে। চলতি সপ্তাহে ইরান মহাশূন্যে প্রথমবারের মতো একটি সামরিক উপগ্রহও পাঠিয়েছে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী তাদের উপগ্রহের উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে বলে দাবি করলেও এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
পাল্টা জবাব ইরানের
এদিকে ইরানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল শেখারজি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচিত ইরানকে হুমকি দেয়ার বদলে করোনাভাইরাসের সঙ্কট থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের রক্ষা করা। তিনি বলেন, অন্যদের ভয় না দেখিয়ে করোনাভাইরাসের মহামারী থেকে নিজেদের সেনাবাহিনীকে রক্ষা করাই আমেরিকানদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা আইএসএনএকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি যোগ্য ও দক্ষ হয়, তবে করোনাভাইরাস থেকে দেশকে সুরক্ষায় তাদের সেনাসদস্যদের মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে যাবে। তাদের দেশে আঘাত হানা বড় একটি সঙ্কট থেকে নাগরিকদের রক্ষায় অন্যান্য মার্কিন বাহিনী প্রস্তুত করার আগে তারা এই কাজটি করবেন।’
আলজাজিরা ও রয়টার্স