প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন সবশ্রেণী পেশার মানুষ। ফলে দেশে এসব সামগ্রীর সঙ্কট রয়েছে। এ সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এখন শুধু চিকিৎসকই নন, পুলিশ, সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সচেতন অনেক সাধারণ মানুষও পরিধান করছেন পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) ও মাস্ক। ফুটপাথ থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠানের পিপিইতে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে কিন্তু এসব পিপিইর অধিকাংশই মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামটি মোটেও সুরক্ষা দিতে পারছে না। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ পিপিই কম পড়লেও মাস্ক পরেই প্রতিদিনের কাজ করছেন সবাই। কিন্তু মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এন-নাইনটি ফাইভ নামের মাস্কের কথা বলে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এফএফসি ১ এস মাস্ক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন নকল মাস্ক, কিট ও পিপিই বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারণে ঝুঁকি বেড়েছে করোনা বিস্তারের। সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সাধারণ মানুষের জন্য মাস্ক আর সেবা প্রদানকারীদের সুরক্ষায় পিপিই পরতে বলা হচ্ছে বারবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে মিলেছে এন নাইনটি ফাইভ নামে বিক্রি করা অন্য মাস্কের খোঁজ।
র্যা বের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, করোনার মহামারীতে সুরক্ষামূলক সামগ্রীগুলো নকল হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। একজন ক্রেতা বিশ্বাস করে এসব পণ্য ব্যবহার করছেন। কিন্তু নকল পণ্য হওয়ায় তাকে ভাইরাস থেকে কোনো সুরক্ষাই দেবে না। এসব সামগ্রীর মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক আমেরিকা ও চীনে তৈরি হয়। বর্তমান বিশ্বে এই মাস্কের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। এটার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী চীন থেকে মাস্ক আমদানি করে সেসবে গায়ে এন-৯৫ সিল লাগিয়ে দিয়ে বিক্রি করছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরায় নকল মাস্কের গোডাউনে অভিযান চালিয়েছেন র্যা বের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এন-৯৫ নকল মাস্ক আমদানি ও মজুত করার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাসুদ চৌধুরীকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে আর কখনো এ ধরনের মাস্ক আমদানি না করতে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।
র্যা ব-১ ও ওষুধ প্রশাসন ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর ভবনে অভিযান চালায়। সেখানে জাহানারা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে পঁহ্নাচ লাখ পিস নকল এন-৯৫সহ বিভিন্ন ধরনের মাস্ক মজুত রাখা হয় এক সপ্তাহ ধরে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যা ব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে পাঁচ লাখ পিস নকল মাস্ক চীন থেকে আমদানি করে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মাসুদ চৌধুরী। এ অভিযোগে তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাস্কগুলো এন-৯৫ না হলেও সেগুলোর মান এফএফপি-১ এস ক্যাটাগরির। এই ধরনের মাস্কও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু সেগুলোর গায়ে এন-৯৫ সিল লাগিয়ে দিয়ে আরো উন্নতমানের বলা হচ্ছে। বর্তমানে মাস্ক সঙ্কটের কারণে এফএফপি-১এস মাস্কও করোনা প্রতিরোধে ব্যবহার করতে পারবে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে এন-৯৫ সিল খুলে এফএফপি-১এস সিল বসিয়ে বিক্রি করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে এন-৯৫ মাস্কের বিজ্ঞাপন দিয়ে বেশি দামে নকল মাস্ক সরবরাহ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অনলাইনে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করার বিরুদ্ধেও অভিযান চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, বাজারে এন-৯৫ নামে যে মাস্কগুলো চলছে সেগুলো বেশির ভাগই নকল। এ ছাড়াও করোনভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রীর সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান নকল সামগ্রী চড়া দামে বিক্রি করছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, যারা নকল সামগ্রী বিক্রি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছেন তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। জানা গেছে, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যবসা করলেও করোনাকালে তারা নেমেছে মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট ব্যবসায়। কিন্তু এসব ইক্যুইপমেন্ট বেশির ভাগই মানহীন।
এ বিষয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ডা: সালেহ আহমদ শাওন বলেন, আসলে যেসব পিপিই পরে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যায় এবং জীবাণুরোধক, সেগুলো অনেক মান নিয়ন্ত্রণ করে তৈরি করা হয়, সেগুলোর দামও বেশি। এখন যে যেভাবে পারছে, পিপিই বানাচ্ছে, বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। তারা কতটুকু মান নিয়ন্ত্রণ করে সেটি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। কারণ জীবাণু রোধে যে কোয়ালিটি রক্ষা করা দরকার, অধিকাংশই তা করছে না।
অনলাইনে ও বিভিন্ন দোকানে যেসব পিপিই পাওয়া যাচ্ছে তার অনেকগুলোর দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। অনেকেই এসব কেনার পর মন্তব্য করছেন এটাকে সাদা রেইন কোট বলাটাই শ্রেয়তর। অনেক গরম লাগে। অল্পতেই ঘেমে যেতে হয়।