আগামী মে মাসের মধ্যে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার থেকে ১ লাখের কাছাকাছিতে পৌঁছতে পারে। আর মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁতে পারে। এমন আশঙ্কা নিয়েই করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রস্তুতি রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় এক সভায় এ তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পুলিশের আইজি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, ডিজিএফআই ডিজি ও এনএসআই ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। এই সভার কার্যবিবরণী সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে সভায় অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা দু’টি সিনারিও (দৃশ্যকল্প) প্রস্তুতি করেছেন। প্রথম প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ৩১ মে অবধি ৪৮-৫০ হাজার লোক করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এবং মৃত্যুবরণ করতে পারেন ৮০০-১০০০ ব্যক্তি। অন্য প্রক্ষেপণ অনুসারে আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে প্রায় এক লাখ মানুষ।’ তিনি জানান, এই খারাপ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। এই সব আদর্শকল্পের অনেকগুলো ফ্যাক্টর বিবেচনা ও ব্যবহার করা হয়েছে (যেমন-লকডাউন, জনসচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি এবং এগুলোর বর্তমান পর্যায়)। আলোচ্য প্রক্ষেপণটি বিবেচনায় রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার প্রস্তুতি গৃহীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি আরো জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসারে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ রোগীর হাসপাতাল সেবা প্রয়োজন।
সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) জানান, সারা দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের হাসপাতাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকের একটি ম্যাপিং সম্পন্ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বর্তমানে সরকারিভাবে প্রায় ৬ হাজার শয্যা প্রস্তুত আছে। এর ধারাবাহিকতায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে সারা দেশে মোট ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সভায় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রথম থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পরিস্থিতি এখনো অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, ঘরে বসে করোনার চিকিৎসা পাওয়া যায় এ রকম একটি চিকিৎসা পদ্ধতি প্রণয়ন করে সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, রোগ বিস্তার প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মডেল এবং চিকিৎসার জন্য চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মডেল গ্রহণ করতে পারি। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে প্রক্ষেপণ হালনাগাদ করতে হবে।
সভায় পুলিশের আইজি বলেন, ক্রমান্বয়ে হোম কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ৬টি জেলা (কোভিডবিহীন) আংশিক লকডাউন প্রত্যাহার করা যেতে পারে। আর যদি সম্পূর্ণ লকডাউনে যেতে হয় তাহলে মানুষের সম্পূর্ণ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ কাজে ব্যাপক রিসোর্সেস প্রয়োজন হবে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় ধান কাটার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ হাজার শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব সভায় জানান, মে মাস পর্যন্ত খাদ্য সহায়তার জন্য যথেষ্ট খাদ্য মজুদ রয়েছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য পেশের পর ৫টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেগুলো হলো- সপ্তাহে একবার এ ধরনের সভা করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর, রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় কোভিড-১৯-এর বিস্তার বিষয়ে প্রক্ষেপণ এবং নীতি নির্ধারকদের অবহিত করবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত প্রটোকলের ভিত্তিতে একটি টেলিমিডিসিন গাইডলাইন প্রণয়ন করবেন। রোগীদের ঘরে বসে চিকিৎসা দেয়ার যে সুবিধা বর্তমানে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর তা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করবে। যে সকল এলাকায় কোভিড এর প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব এলাকায় লকডাউন ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করবে এবং যে সকল হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে সেগুলোতে সকল সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সকল হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকা ও খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করতে হবে।