করোনা মহামারির সময়ে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপব্যবহার চলছে অভিযোগ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপি সুস্পষ্ট ভাষায় সরকারকে জানাতে চায়, বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেবল সরকারকে জনরোষের আগুন থেকে রক্ষার জন্যই অপব্যবহার চলছে। এই মুহূর্তেই রাষ্ট্রের এই অন্যায় বন্ধ করতে হবে।”
‘‘ এই গণবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। আমরা চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির সময়ে সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ করে গ্রেফতার ও হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া সকল ‘বিবেকের বন্দী’সহ সকল রাজবন্দি, আদালত পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে না খোলা পর্যন্ত হত্যা-ধর্ষণসহ জঘন্য অপরাধ ছাড়া সকল প্রকার গ্রেফতার বন্ধ রাখা অথবা বিকল্প হিসেবে গ্রেফতারকৃতদের আদালত খোলার পর আত্মসমর্পণের শর্তে মুচলেকায় মুক্তি, কারাবন্দি লঘু অপরাধে ও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারসহ বয়স্ক ও মহিলা বন্দি, দলের সিনিয়র নেতা আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর, ছাত্রনেতা ইসহাক সরকার, শেরপুর জেলা নেতা হযরত আলীসহ দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকা নেতাদের মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
একইসঙ্গে সকল কারাকর্মকর্তা ও কারারক্ষীর নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা এবং সংক্রমিতদের যথাযথ চিকিৎসার দাবিও জানান তিনি।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নতুন করে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, লেখক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষজন গ্রেফতারের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশে একটি কার্য্করী মানহানি আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতন ও হয়রানি উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকেই বারবার ব্যবহার করছে সরকার। মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে পেছনে হাতমোড়া অবস্থায় হ্যান্ডক্যাফ পরা সাংবাদিকের (শফিকুল ইসলাম কাজল) ওই ছবিসহ সংবাদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকার কিভাবে সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলছে তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।”
‘‘গণতান্ত্রিক অধিকার তো দূরে থাকুক মানুষ তার কষ্টের কথাও যাতে ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ করতে না পারে তার জন্য একের পর এক পরিপত্র জারি করে চলেছে সরকার। বিটিআরসির মতো একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিণত করেছে ডিজিটাল জগতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রধান পুলিশি প্রতিষ্ঠানে। শুধু বিএনপি নয়, সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদপত্র সম্পাদকদের সম্মিলিত সংগঠনও ওই গণবিরোধী আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বারবার। ইতিমধ্যে সাতজন রাষ্ট্রদূতও টুইটারের মাধ্যমে এই গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে বলেছেন সরকারকে।”
তিনি বলেন, ‘‘ দেশের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হরদম গ্রেফতার করা হচ্ছে ও আতঙ্কর মধ্যে রাখা হয়েছে। অথচ ত্রাণের চাল চোর ও গমচোররা নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের নিষ্ঠুর, অমানবিক ও ফ্যাসিবাদীঅ চরিত্রে মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।”
‘‘ডিজিটাল বাংলাদেশের কৃতিত্ব ফলাওকারী এই সরকার নিজেই দেশের মানুষের ডিজিটাল অধিকার-বিনাশী দৈত্য রূপে আর্ভিভূত হয়েছে।”
দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেই কী পরিপত্র জারি?
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকারের জারিকৃত পরিপত্রগুলো কী রকম ডিক্টেটোরিয়াল চিন্তা করা যায় না। এখন চাল চুরি হচ্ছে, গম চুরি হচ্ছে, সোয়াবিন তেল চুরি হচ্ছে, রিলিফ চুরি হচ্ছে – এসব সম্পর্কে যদি লেখতে যান তাহলে কি সেটা অন্যায় হবে? সত্য উদঘাটন করাই তো সাংবাদিকদের কাজ।”
‘‘ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধরনের আইন করে, এই ধরনের পরিপত্র জারি করে শুধুমাত্র দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এখন যে প্রশ্নটা এসে যায় যে, সরকার এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত নীরব কেন? আর যারা এসব তুলে ধরছে, কথা বলছে তাদের ওপর সরকার দমনপীড়ন চালাচ্ছে কেন?”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ এই যে সত্য খবর লুকানোর কারণটা কী, গোপন করার কারণটা কী? কেন এই ধরণের দমন-নির্যাতন চলছে? তার অর্থ সত্য কথা যাতে বেরিয়ে না আসে। এটা কার স্বার্থে যাচ্ছে? সরকারের স্বার্থে কিন্তু যাচ্ছে না আল্টিমেটলি।”
‘‘ এই সত্য গোপন করার ফলে ইনফর্ম না হওয়ায় সেই কাজগুলো করতে পারবে না। এমনিতে তো বিচ্ছিন্ন সবাই। তার পরে যদি সোশ্যাল মিডিয়ার খবরগুলো যদি না পায় তাহলে খবর জানবে কোত্থেকে।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।