করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ। বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে যোগ হয়েছে ডেঙ্গু। তাই যদি জ্বর এসেই যায় তাহলে কীভাবে বুঝবেন আপনার করোনা নাকি ডেঙ্গু?
করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এখন অনেকেই জ্বর আসলে আগে করোনার টেস্ট করাতে যাচ্ছেন। টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসছে কিন্ত জ্বর সারছেনা। এ নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। জ্বর আসা মানেই করোনা হয়েছে তা কিন্ত না। ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন বাড়ছে। হতে পারে আপনার ডেঙ্গু হয়েছে।
করোনা এবং ডেঙ্গু জ্বর প্রসঙ্গে কথা বলেছেন শেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসাইন। বর্তমানে তিনি করোনা টেস্টের কাজের সঙ্গেও যুক্ত।
ডেঙ্গু এবং করোনার উপসর্গের রয়েছে পার্থক্য। করোনার ক্ষেত্রে রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে উপসর্গ আলাদা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত জ্বর। মূলত, এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলোরর মধ্যে রয়েছে— জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষয়ী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
জ্বর আসলে প্রথমে আলাদা উপসর্গগুলো চিহ্নিত করতে হবে। করোনাভাইরাসে জ্বরের মাত্রা কম থাকে কিন্ত ডেঙ্গু জ্বরের মাত্রা বেশি থাকে। ডেঙ্গুতে শরীরে অনেক সময় লাল গুটি বের হলেও করোনায় এমন কিছু দেখা যায় না। ডেঙ্গুতে শরীর ব্যথা করে কিন্ত করোনার লক্ষণে এমনটা হয়না। করোনা ভাইরাসের ফলে শরীরে রক্তের প্লাটিলেট কমে না কিন্ত ডেঙ্গুতে অনেক সময় রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেন এডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে। দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। অন্যদিকে করোনার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে যাওয়া যাবে না। আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে যাবেন না। হাঁচি, কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। করোনাভাইরাস একজনের কাছ থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও ডেঙ্গু এভাবে ছড়ায় না।
তবে করোনা অথবা ডেঙ্গু যে কোনোটিতেই আক্রান্ত হলে ভয় পাবার কারণ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে দুই ধরনের রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন।