কোভিড-১৯ মহামারির খলনায়ক নতুন করোনাভাইরাসকে দমাতে এখনো পর্যন্ত ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। এখন পাবলিক প্লেসে গেলেই দেখা যায় অধিকাংশ মানুষের নাক-মুখ মাস্কে আবৃত। এই দৃশ্য আমাদেরকে একটা কথা মনে করিয়ে দেয়- নিজেকে ও আশপাশের মানুষকে রক্ষার্থে মাস্ক পরতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে, স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা এখন মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়ার কথা কল্পনাই করতে পারেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের ফলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ধীর হবে অথবা কমে যাবে। কিন্তু সকলের জন্য মাস্ক নিরাপদ এমন কথা বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কহীন ঝুঁকির কারণে কিছু লোকের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত নয়।
সংস্থাটি বলেছে, ‘দুই বছরের কম বয়সি শিশু, শ্বাসকষ্টের রোগী অথবা অজ্ঞান বা চলতে ফিরতে অক্ষম বা অন্যের সাহায্য ব্যতীত মাস্ক খুলতে পারে না এমন লোকদের মাস্ক পরানো উচিত নয়।’ এদের ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
উইডেনার ইউনিভার্সিটির নার্সিং সায়েন্সের প্রফেসর ড্যারেল স্পুরলক ভেঙ্গে বলেন, ‘দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য মাস্ক বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ তাদের শ্বাসনালী বড় ছেলেমেয়ে ও প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের তুলনায় কম অনমনীয়। এছাড়া কোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শারীরিক সক্ষমতা তাদের নেই, যেমন- টাইট মাস্ক গলায় নেমে বিপদ ঘটতে পারে। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, মুখমণ্ডলে মাস্ক থাকলে শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায় না। এটা সেসব শিশুদের জন্য মারাত্মক পরিণতির কারণ হতে পারে যাদের ইতোমধ্যে শ্বাসতন্ত্রীয় রোগ রয়েছে।’
যেসব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তাদের ক্ষেত্রেও মাস্কের ব্যবহার আরো বিপদ ডেকে আনতে পারে। ওহাইওর চিকিৎসক লিয়ান পোস্টন বলেন, ‘যাদের হাঁপানি ও দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসীয় রোগ রয়েছে তাদের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এসব লোকেরা মাস্ক ব্যবহার না করলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, অন্যদিকে মাস্ক ব্যবহার করলে শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা তীব্র হতে পারে। তাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে, সম্ভব হলে ঘরে থাকুন। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে অবশ্যই বাইরে যেতে হলে বিভিন্ন ধরনের ফেস মাস্ক ব্যবহার করে এটা যাচাই করতে পারেন যে, কোন মাস্কে তুলনামূলক সহজে শ্বাসপ্রশ্বাস হচ্ছে। যে মাস্ক পরে বের হবেন তা আগে ঘরে চর্চা করুন। আমি মনে করি, মাস্ক একেবারে ব্যবহার না করার চেয়ে ঢিলা মাস্কের ব্যবহার তুলনামূলক ভালো। এতে শ্বাসক্রিয়া সহজ হবে ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমানো যাবে।’
যাদের মাস্ক খুলে ফেলার সক্ষমতা নেই তাদেরকে মাস্ক পরালেও অনুরূপ বিপদ হতে পারে, এমনকি তাদের পরিণতি আরো মারাত্মক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা শ্বাসরোধে মারা যেতে পারেন।
মাস্ক ব্যবহারে শ্বাসক্রিয়ায় তীব্র প্রভাব পড়লে এই সুরক্ষা উপকরণ পরবেন কিনা পুনরায় বিবেচনা করুন। যদি সিদ্ধান্ত নেন যে আর নয় মাস্ক, তাহলে আপনাকে সবসময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে।