করোনাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সঙ্গে রেমিট্যান্সও বেড়েছে। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে থেকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে আমদানি নাই বললেই চলে। সে কারণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে না বিধায় রিজার্ভ বেড়েছে। পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো বাজেট সহায়তা হিসেবে যে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলো এসেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ঈদের আগে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠায়। এর প্রতিফলন পড়েছে রিজার্ভে। এ মাস শেষে কতটা রেমিট্যান্স আসলো সেটা দেখে বোঝা যাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রবাসীরা কতটা ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, এখন যে রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে এর কোনও স্থিতিশীলতা নেই। আমদানি শুরু হলেই এটা কমে যাবে। শিল্পগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি হচ্ছে না। কাঁচামাল আমদানি করা না গেলে রপ্তানিও হবে না, বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন সম্ভব হবে না। রিজার্ভ কোনও কাজে আসবে না। কাজেই রিজার্ভ বৃদ্ধির বিষয়টিতে আমি কোনও সুসংবাদ দেখছি না।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, রিজার্ভ বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে। করোনাভাইরাস জাতীয় জীবনে যেভাবে প্রভাব ফেলেছে তা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার এ রিজার্ভ কাজে লাগবে। আশা করছি অর্থনীতিতে বর্তমানে যে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আবার গতি সঞ্চার হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. এম. আবু ইউসুফ বলেন, করোনার কারণে দেশে আমদানি কমে গেছে। অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। আমদানি কম হওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে না। এর সঙ্গে দাতা সংস্থাগুলোর দেওয়া ঋণ এবং বাজেট সহায়তার অর্থ রিজার্ভকে স্ফিত করছে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীরা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে আসেছে। করোনা পরিস্থিতিতে এ সময় যারা প্রবাসে কাজ করছেন আগামীতে তাদের কাজের পরিবেশ এবং সুযোগের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। প্রবাসীরা প্যানিকের মধ্যে আছেন। এ অবস্থায় তাদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া ঈদের আগে সব সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। এবার একটু বেশি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে আমদানি হচ্ছে না। ফলে ব্যয় কমে গেছে। আবার রপ্তানি আয়ও কম। তবে প্রবাসী আয় আসছে, সঙ্গে ঋণ ও অনুদানও। এ কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। এটা কত দিন ধরে রাখা যাবে, তা নির্ভর করছে রপ্তানি ও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর।
করোনার মধ্যে গত ১ ও ২ জুন প্রবাসী আয়, অনুদান ও ঋণ হিসেবে ১৬ কোটি ডলার এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বা ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। ঈদকে সামনে রেখে মে মাসে প্রবাসীরা ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ১২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। গত ৩ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হয় ৩ হাজার ৪২৩ কোটি ডলার। ২০১৭ সালের ২২ জুন রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। তথ্যসূত্র: রাইজিংবিডি