বরগুনার তালতলীতে মাছরাঙা পাখি জবাই করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ।
তদন্ত কার্যক্রম শুরুর পর নানা কারণে পুলিশের ধারণা- পাখিটি ডিমসহ বাসা থেকে ধরার পর অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান ফারুক নিজেই জবাই করে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।
যদিও শুরু থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নন বলের দাবি করে আসছেন কামরুজ্জামান। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত পদক্ষেপ তিনি নেননি। বরং মামলা দায়েরের পর গা ঢাকা দিয়েছেন।
বরগুনার পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমিরা জানান, ছয়টি ডিম দেওয়া এক মাছরাঙা পাখিকে ধরার পর জবাই করে গত সোমবার (৮ জুন) সেই ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন বরগুনার তালতলী উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান ফারুক। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘’অনেক তাড়াইছি, লাভ হয় নাই, অতপর বাসায় রেড।’
ছবিটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সমালোচনার ঝড় ওঠার পাশাপাশি দাবি ওঠে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও।
এদিকে মঙ্গলবার (৯ জুন) কামরুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে সাগর কর্মকার নামে স্থানীয় এক তরুণ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত করছে তালতলী থানা পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনার পর ছাত্রদল থেকেও বহিষ্কার করা হয় কামরুজ্জামান ফারুককে।
মামলা হওয়ার পর গা ঢাকা দেওয়ায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান ফারুকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনার পরপর এবং গা ঢাকা দেওয়ার আগে তিনি জানিয়েছিলেন, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একটি দোকানের কম্পিউটারে ওপেন করা ছিল। চলমান লকডাউনের কারণে সেই দোকান বন্ধ থাকায় তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি কম্পিউটার থেকে লগআউট করতে পারেননি। এরইমধ্যে ওই কম্পিউটার বিক্রিও করা হয়েছে।
তিনি তখন বলেছিলেন, ‘কম্পিউটারটি এভাবে হাতবদলের মাধ্যমে কেউ একজন ওই মাছরাঙা পাখির ছবি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড করেছে।’ এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলেও দাবি করেছিলেন।
এ বিষয়ে তালতলী থানার ওসি শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা মামলাটির তদন্ত করছি। তদন্ত কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তে আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি- তাতে মনে হচ্ছে, ক্ষোভের কারণে কামরুজ্জামান ফারুক নিজেই মাছরাঙাটিকে ধরে, গলা কেটে মেরে ফেলেন। আর ওই বীভৎস ছবি তিনি নিজেই তার ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করেন।’
মামলার বাদি সাগর কর্মকার বলেন, ‘‘২০১২ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রটেকটেড বার্ড বা সুরক্ষিত এসব পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে কেউ জড়িত হলে এক বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
‘একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাই আশা করব, প্রশাসন কামরুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধে পাখিহত্যার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক রুদ্র রুহান বলেন, ‘মাছরাঙা বাংলাদেশে প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির পাখি। পাখিটি নির্দয়ভাবে হত্যার বিষয়টি অমানবিক ও সেটি ফেসবুকে বীরদর্পে আপলোড দেওয়া বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক। আমরা পাখি হত্যাকারীর বিচার দাবি করছি।’