নীলফামারী জেলার গরুরগুলোর শরীরে লাম্পি স্কিন ভাইরাস রোগের প্রাদুভার্ব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগটি মরণব্যাধি না হলেও খামারিরা এ রোগের প্রাদুর্ভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে জেলার ছয়টি উপজেলার বেশ কিছু গরুর মধ্যে লাম্পি স্কিন ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যায়। এখন বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় দেড় সহস্রাধিক গবাদিপশু উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
ভাইরাসটি প্রাথমিকভাবে গরুর জ্বর, পা ও গলা ফুলে যাওয়া, পরে ফেটে যাওয়া, গলায় ব্যাথা হওয়া, শরীরে গুটি হয়। এসব উপসর্গ নিয়ে ভাইরাসের প্রভাব বিস্তার করে। রোগটি ভাইরাসজনিত হওয়ায় মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসে বেশ কিছু গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গরুর দুধ উৎপাদন কমে, ওজন কমে যায় ও চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশকিছু জায়গায় লাম্পি স্কিন ভাইরাসে গরু আক্রান্ত হয়েছে। জেলার ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নওদাবস এলাকার কৃষক নন্দলাল বর্মন বলেন, আমার দশটি গরু লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি বাছুর মারা গেছে। আক্রান্ত গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে। একই এলাকার রামপ্রাসাদ, অর্থলাল, লালুরামের গরুর গলা ও পা ফুলা, শরীরে গুটি দেখা দিয়েছে। গরু রাখার খোলামেলা জায়গা না থাকায় একই স্থানে অসুস্থ্য গরুর সাথে সুস্থ্য গরু রাখায় সেগুলোও মশা মাছি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ঝুকিতে রয়েছে।
সোনারায় ইউনিয়নের জামির বাড়ী এলাকার মধুসুধন রায়, হিরাম্ব রায় ও ধীরেন্দ্রনাথ জানান, এক সপ্তাহ আগে গরু গুলোর মধ্যে জ্বর,পা ও গলা ফুলে যায়। শরীরে গুটি দেখা দেয়। চিকিৎসা চলছে, এখন গরুগুলো অনেকটা সুস্থ্য হয়েছে। তারা বলেন, এক একটি গরুর চিকিৎসা করতে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। যা এখন আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
টাকার অভাবে অনেকে আক্রান্ত গরুগুলোর চিকিৎসা করাচ্ছে না। কেউ কেউ গ্রামের কবিরাজ ও নামধারী হাতুড়ি ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা করছে। এতে কিছু গরুর মৃত্যুও হচ্ছে। যা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের হিসাবের আওতায় নাই। এরফলে দেখা গেছে, প্রাণি সম্পদ দপ্তরের হিসাবের বাইরে অনেক বেশি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
জেলঅ প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী জানান, এটি একটি ভাইরাসজনিত চর্মরোগ, যা শুধু গরু ও মহিষকে আক্রান্ত করে। কিন্তু এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না। আক্রান্ত গবাদিপশুর মৃত্যুর হার খুব কম, নাই বললেও চলে। তবে গ্রামে কিছু অপচিকিৎসার কারণে বেশ কিছু গরু মারা গেছে। এ রোগটি বাংলাদেশে নতুনভাবে আর্বিভাব হয়েছে। এ পর্যন্ত রোগটির কোন ওষুধ তৈরী হয়নি। হিউম্যানের জ্বর ও পক্সের ঔষধ টায়াল দেওয়া হচ্ছে। দুই তিন সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ সেরে যায়।
তিনি আরও বলেন, এই ভাইরাসে ভয়ের কোন কারন নেই! এটি গবাদিপশুর মরণব্যাধি নয়। খামারিরা আতঙ্কিত না হয়ে ধৈয্য ধারণ করতে হবে। তবে খামার মশা-মাছি মুক্ত পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।