করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারে আরো একধাপ এগোল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের আবিস্কৃত ভ্যাকসিনটি দ্বিতীয় পরীক্ষাও সফল হয়েছে। তবে ভ্যাকসিনটির ব্যবহারের স্বীকৃতি পেতে তৃতীয় দফার পরীক্ষায়ও উত্তির্ণ হতে হবে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ভ্যাকসিনটির প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, তৈরিকৃত করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি শূকরের দেহে পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক সাফল্য দেখিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরিকৃত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনটি শূকরের দেহে এক ডোজের পরিবর্তে দুই ডোজ প্রয়োগ করায় তাতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে।
ব্রিটেনের পিরব্রাইট ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে একটি প্রধান ডোজ দেয়ার পর আরেকটি সহায়ক ডোজ দেয়া হলে তা নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে একক ডোজের চেয়ে উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। যে কারণে এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে একক ডোজের চেয়ে দুটি ডোজ প্রয়োগ করা হলে তা অধিক কার্যকরী হতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছেন মূলত ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিনটির উন্নয়ন এবং উৎপাদনের জন্য বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে কাজ করছেন।
ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্ত পাবেন বলে আশা করছেন।
বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের অন্তত এক ডজন ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরও শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এদিকে ভাইরাসটি আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থা বলেছে, বিশ্ব বর্তমানে একটি নতুন এবং বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে।
তবে করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষা উতড়ে যেতে পারেনি। কোনো ভ্যাকসিনের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে হলে শেষ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হতে হবে।
চীনের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত ছয়টি সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। শনিবার চাইনিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি (আইএমবিসিএএমএস) তাদের তৈরি একটি দ্বিতীয় দফায় মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। আইএমবিসিএএমএসের এই ভ্যাকসিনটি চীনের তৈরি ছয়টি ভ্যাকসিনের একটি।
এদিকে, মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ তিনজন চীনা সাংবাদিকের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কিছু কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীরে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে চীন। চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপের (সিএনবিজি) তৈরি এই ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই তা প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এর আগে দেশটির যেসব কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কাজে বিদেশে যাওয়া-আসা করছেন তাদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। বর্তমানে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ওই কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। এখন বেইজিং শহরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে চায় চীন।
ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই চীন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারে, সেটি জানা যায় মে মাসের শেষ দিকে। ওই সময় সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে সে বিষয়ে চীনের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি থেকে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে।
সূত্র : রয়টার্স