জীবনসঙ্গীর সব অভ্যাস আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে। আপনার সঙ্গী যে সব দিক থেকে পারফেক্ট হবে এ রকম প্রত্যাশা থাকাও ঠিক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রত্যাশা থেকে মনোমালিন্য, অভিমান, ঝগড়াঝাঁটির সৃষ্টি হয়। সবকিছুতেই সঙ্গীকে দোষ দেয়া বা ভুল ধরা যেন প্রতিদিনের নিয়ম হয়ে যায়।
একটি গবেষণা থেকে বেশ আশঙ্কামূলক একটি তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিনিয়ত জীবনসঙ্গীর খুঁত ধরার মতো আচরণ কেবল যে তাকে সার্বক্ষণিক একধরনের পীড়ার মধ্যেই রাখবে তা নয় বরং তার স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর উপরেও এটা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
হ্যাঁ! এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদানকারী গবেষণাটি করেছে নিউ ইয়র্কের লাফায়েট কলেজের একদল গবেষক। প্রথমবার তারা এই গবেষণাটি করে ২০০৫ সালে এবং পরবর্তীতে ২০১০ সালে তারা পুনরায় এই গবেষণা করেছিলেন।
আর এই দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত জীবনসঙ্গীর থেকে সমালোচনা ও রাগারাগি করা হলে অপর সঙ্গীর ওপর কেবল বিরূপ মানসিক প্রভাবই পড়ে না বরং তার শারীরিক অবস্থার অবনতিও দেখা যায়। তবে এই বৈরী আচরণ ও স্বাস্থ্যগত দ্বৈরথের বিষয়টি অল্প কয়েকদিনেই বুঝা যায়নি। বরং এই ধরনের সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমেই এই অবনতির ধারাটি পরিলক্ষিত করা হয়। এমনকি সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, এই ধরনের বৈরী আচরণের শিকার সঙ্গীদেরকে অনেক অল্প বয়সেই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে মৃত্যুবরণ করতে দেখা যায়।
পরপর দুটি গবেষণায় একটি তথ্যই বারংবার উঠে এসেছে যে, একটা বয়স পর্যন্ত মানুষ এই ধরনের আচরণ সহ্য করতে পারে। তবে মধ্য বয়সে যখন পদার্পণ করে থাকে, তখন এই ধরনের বিরূপ আচরণ মানসিক এবং শারীরিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যের উপরেই ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করে এবং দ্রুত মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
কিন্তু এমনটা কেন হয়? এর কারণ সন্ধান করতে গিয়ে গবেষণাকারী দল দেখেছেন যে, প্রতিনিয়ত খুঁত ধরতে থাকার কারণে সঙ্গীর মধ্যে ডিপ্রেশন, এংজাইটি, মানসিক চাপ এবং একাকীত্ব অনুভব বাড়িয়ে দেয়। আর মানুষের শরীর পুরোটাই মানুষের মন অর্থাৎ মস্তিষ্ক দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই মানসিক সমস্যাগুলো পরবর্তীতে পরোক্ষভাবে শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং সেখান থেকে উঠে আসার মতো মনোবল ভুক্তভোগী সঙ্গীর মধ্যে আর পাওয়া না।
কিছুদিন আগেই ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে’ পাবলিশ হওয়া একটি রিসার্স পেপারে দেখা গেছে, মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে তা অল্প বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সঙ্গী থাকার পরেও যখন কারো মধ্যে একাকীত্ব ভাব প্রবল হয়ে উঠে তখন সম্পর্কটি আরো বেশি খারাপের দিকে চলে যায়। এমনকি সেই ভুক্তভোগী ব্যক্তি পরিবার ও বন্ধুদের থেকেও ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়।
বৈরী সম্পর্ক ও অল্প বয়সের মৃত্যুর মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে ২০১৫ সালে আরেকটি রিসার্স পেপার পাবলিশ হয়েছিল ‘সার্কুলেশনঃ কার্ডিওভাসকুলার কোয়ালিটি অ্যান্ড আউটকামস’ নামক একটি জার্নালে। সেখানে উঠে এসেছে দীর্ঘ সময় ধরে ডিপ্রেশন এবং মানসিক চাপের মধ্যে থাকলেও অল্প বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
এই ধরনের বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায়, একটি অসুস্থ সম্পর্কের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আর তাই আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত সঙ্গীর খুঁত ধরে রাগারাগি না করে বরং একটি চমৎকার ও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করা। একটি সুন্দর সম্পর্ক একটি সুন্দর পরিবার এবং সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। ছোটখাটো দোষত্রুটি যদি ঢেকে ফেলা যায়, তাহলে সম্পর্কের বাঁধন পোক্ত করা সম্ভব।