ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে সরকার। প্রথম ধাপে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (পিডিপিপি) প্রস্তুত করা হয়েছে। রেললাইন নকশার কাজ শুরু হয় আজ থেকে ছয় বছর আগে। প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হলেও সমীক্ষা শেষ হয়নি। ফলে বরিশাল রেললাইন সমীক্ষা কাজে আবারো বাড়ছে সময় ও ব্যয়।
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করে পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিডিপিপিটির নীতিগত অনুমোদন দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি অর্থায়নে ৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশদ ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়নসহ ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার কথা। পরবর্তীতে প্রথম বার ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের পরিধি বাড়ছে। বিশেষ করে, বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
সমীক্ষা প্রকল্পের প্রধান কাজ দুটি। প্রথমটি হচ্ছে—বিশদ ডিজাইন ও দরপত্র দলিল প্রণয়নসহ ফরিদপুর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কাজ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে—গাণিতিক মডেলে বিস্তারিত টপোগ্রাফি সার্ভে, হাইড্রোলজিক্যাল এবং মরফোলজিক্যাল স্টাডি। দুটি কার্যক্রম ছয়টি প্যাকেজে সম্পন্ন হচ্ছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে সার্ভে, সোশ্যাল সার্ভে ও জিওটেকনিক্যাল সার্ভে চলছে।
নানা কারণে প্রকল্পের সময়-ব্যয় আবারও বাড়ছে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৮ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে পরামর্শক নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাব ২০১৮ সালের ১৩ জুন অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৯ জুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। নানা কারণে শুধু পরামর্শক নিয়োগেই ১৮ মাস সময় অতিবাহিত হয়।
প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসউদুর রহমান বলেন, ‘পরামর্শক নিয়োগসহ নানা কারণে প্রকল্পটি সঠিক সময়ে শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। কাজ এখনো ২০ শতাংশ বাকি। কাজগুলো সম্পন্ন করতে আরো সময় লাগবে। সময় চেয়ে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে আবেদন করেছি। আশা করি, বাড়তি সময়ে প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে পারব।’
বরিশাল বাংলাদেশের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হলে বরিশাল ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আরো বাড়বে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ আরো ভালো হবে।