লকডাউন তুলে নেয়ার পর বেশিরভাগ অফিসই খুলে দেয়া হয়েছে। কর্মীরা জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে অফিস করতে যাচ্ছেন। মনে সবসময় একটা ভয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছি না তো?
অফিসে কোনো সহকর্মীর কোভিড-১৯ থাকলে বাকি সকলেই সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন। তাই কারো মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ প্রকাশ পেলে অফিসে কল করে বলতে হবে। ভাইরাস মহামারিতে সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গরোধে চলে যাওয়াটা একপ্রকার সামাজিক দায়িত্ব। এছাড়া অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ প্রকাশ পেতে দেরি হয় অথবা হয়তো প্রকাশই পায় না। তাই এই মহামারিতে অফিসে যতক্ষণ থাকবেন সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে। এখানে করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও সহকর্মীদেরকে সুরক্ষিত রাখতে কি করা উচিত তা সম্পর্কে বলা হলো।
করোনাভাইরাস কিভাবে ছড়ায় মনে রাখুন
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস-২০১৯ সম্পর্কে এখনো আমরা অনেককিছু না জানলেও এটা জানি যে ভাইরাসটি ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সংক্রমিত ব্যক্তির ড্রপলেট। ড্রপলেট হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র তরল কণিকা, যা হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় শরীর থেকে বের হয়। সংক্রমিত ব্যক্তির ড্রপলেটে অসংখ্য করোনাভাইরাস থাকে। কোভিড-১৯ রোগী কোনো সুস্থ লোকের সামনে কাশি বা হাঁচি দিলে তিনিও সংক্রমিত হবেন; কারণ ড্রপলেট উড়ে এসে নাকে, মুখে ও চোখে প্রবেশ করে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির কথা বলার সময়ও ড্রপলেট বের হয়ে আসতে পারে। কিন্তু সংক্রমিত ব্যক্তির সামনে না থাকলে যে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই একথাও বলা যাবে না। এসব ড্রপলেট সারফেসে পড়ে থাকে। কোন সারফেসের ওপর পড়েছে এর ওপর ভিত্তি করে করোনাভাইরাস কয়েক ঘণ্টা থেকে কিছুদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অসংক্রমিত ব্যক্তি এসব সারফেস স্পর্শ করে নাক, মুখ ও চোখ ধরলে সংক্রমিত হতে পারেন।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যা বিবেচনা করবেন
প্রথমত, এক কর্মীর কাজের স্থান থেকে আরেক কর্মীর কাজের স্থানের মধ্যে ন্যূনতম ৪ বর্গমিটার দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে নিরাপদ দূরত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, অফিসে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। যথেষ্ট ভেন্টিলেটর না থাকলে ভেন্টিলেশন বাড়াতে হবে। ভেন্টিলেশন উন্নত না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রত্যেকটি জানালা খোলা রাখতে হবে। তৃতীয়ত, ক্লিনিং প্রটোকল বাড়াতে হবে। অফিস বন্ধের আগে সমস্ত মেঝেতে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে, ময়লার ঝুড়ি খালি করতে হবে ও অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত সারফেস ভাইরাসমুক্ত করতে হবে। ডেস্ক, লাইট সুইচ, দরজার হাতল, সিঁড়ির রেলিং বা লিফটের বাটন ও টয়লেটের মতো বহুল ব্যবহৃত জিনিসকে অবশ্যই ভাইরাসমুক্ত করতে হবে। চতুর্থত, কোনো কর্মীর করোনা সংক্রমণের উপসর্গ থাকলে তাকে অন্যান্য কর্মী থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে ও বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে কোভিড-১৯ টেস্ট করতে পরামর্শ দিতে হবে ও নেগেটিভ রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত অফিসে আসতে বারণ করতে হবে। পঞ্চমত, সকলকে এটা অবহিত করতে হবে যে করোনা সংক্রমণের উপসর্গে ভুগলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অফিসে আসতে হবে না। এতে চাকরির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। ষষ্ঠত, প্রত্যেকের ডেস্কে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে ও অফিসে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাস্ক পরাতে কারো গুরুতর সমস্যা হলে তাকে আপাতত ছুটি দিতে হবে।
কর্মীদের করণীয়
প্রথমত, কিবোর্ড, ফোন ও মাউসের মতো বহুল ব্যবহৃত জিনিসকে একটা নির্দিষ্ট সময়ান্তরে ভাইরাসমুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে সেসব জিনিসকে ঘনঘন ভাইরাসমুক্ত করতে হবে যা একাধিক জনে ব্যবহার করে। ভাইরাস ধ্বংসকারী তরল দিয়ে ডেস্ক মুছে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা হলো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। হাতের ভাইরাস ধ্বংস করতে সাবান ও পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধুতে হবে। সবসময় সাবান-পানি ব্যবহার করা সম্ভব নয় বলে এর পরিবর্তে অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যাবে। সন্দেহজনক কিছুর সংস্পর্শে এলে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। তৃতীয়ত, বায়ুবাহিত ড্রপলেট থেকে সুরক্ষিত থাকতে সহকর্মী অথবা অন্য লোকের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। চতুর্থত, শ্বাসতন্ত্রীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কাশি বা হাঁচি আসলে টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে অথবা কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচতে বা কাশতে হবে। এর ফলে আশপাশে ভাইরাস ছড়াবে না ও সহকর্মীরা সুরক্ষিত থাকবে। সবশেষ, করোনা সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে বসকে জানাতে হবে ও অফিসে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব কোভিড-১৯ টেস্ট করে রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত ঘরে নিজেকে সঙ্গরোধে রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য কনভারসেশন