করোনা দুর্যোগের মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আগাম বন্যা চলছে। এতে করে কমপক্ষে ১৫ জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টার। বন্যায় মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন ফসলের কি পরিমমাণ ক্ষতি হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে আর্থিক সহায়তা। বন্যায় আক্রান্ত জেলার মানুষের সহায়তা করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসাম, মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত আবার শুরু হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ ১৫ জেলায় বন্যা চলছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) থেকে জানানো হয়, দেশের ৯টি নদীর পানি বইছে বিপদসীমার ওপরে।
এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় ঘর-বাড়িতে পানি ওঠেছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যার পানির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও কাঁচা ও ইটের রাস্তা পানিতে প্লাবিত হয়ে চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘরে পানি ওঠায় বাঁশের পাটাতন করে পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামের বাসিন্দা রহিজ মিয়া বলেন, ধরলা নদীর ভাঙনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ মিটার ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে বাঁধের অর্ধেকেরে বেশি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে নদী তীরবর্তী ২০ থেকে ২২টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। শতাধিক বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশুসহ বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। শাক-সবজিসহ বিভিন্ন শস্য (পাট, গম, সবজি সব শস্য) মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কাউন্সিলর রাবেয়া খাতুন বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের দুর্যোগের কারণে মানুষ ভয়ের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে আবার আগাম বন্যায় ঘরবাড়ি, শাকসবজি সবকিছু ডুবে গেছে। অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পশু নিয়ে নিয়ে উঁচুস্থানে আবার কেউ কেউ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। করোনার কারণে শেল্টারে আশ্রয়কারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাখা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বন্যায় প্লাবিত এলাকায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়াও আরও ১০০ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নতুন বরাদ্দ এলে তা বিতরণ করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন থেকে ২ জুলাইয়ের মধ্যে বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নগদ ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং ৩ হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে। গত ২৬ জুন বন্যায় আক্রান্ত জেলার মানুষের পাশে সহায়তা করতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্যায় মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তা নির্ধারণ করে সহায়তা দেওয়া হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নগদ ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং ৩ হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত এলাকার জেলা প্রশাসকদের ডিমান্ড এসেছে। সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের অধীনে সব সময় নগদ টাকা ও টিআর চাল বরাদ্দ থাকে। সেগুলো বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই বোরোধান ধান কাটা হয়েছে। এখন মানুষের ঘরে খাবার আছে। এরপরেও বন্যকবলিত এলাকার মানুষকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে চার লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বিভিন্ন শস্য এবং মাছের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।