অতিরিক্ত প্রদাহ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। শরীরে প্রদাহের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটে। ভাইরাস সংক্রমণেও প্রদাহ তৈরি হয়। কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হলো উচ্চ মাত্রার প্রদাহ।
আপনি হয়তো জানেন যে কিছু খাবার খেলে প্রদাহ কমে। কিন্তু এমনও কিছু খাবার রয়েছে যা প্রদাহ বাড়িয়ে থাকে। খাবার প্ররোচিত প্রদাহ ও সংক্রমণ জনিত প্রদাহ উভয়ের সমন্বয়ে মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি আকাশচুম্বী হতে পারে। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে ডায়েটের ওপরও বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। ডায়েটে সেসব খাবার রাখতে হবে যা প্রদাহ কমায়, আবার সেসব খাবার বাদ দিতে হবে যা প্রদাহ বাড়ায়। এখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণে খাওয়া উচিত নয় এমনকিছু খাবার সম্পর্কে বলা হলো।
চিনি: বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ছয় চা-চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু চিনি এড়িয়ে চলা আসলেই কঠিন, কারণ বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবারে বেশি মাত্রায় চিনি সংযোজন করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রার চিনি প্রদাহের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে অথবা প্রদাহকে দীর্ঘস্থায়ী করে। খাওয়ার পর চিনি রক্তে প্রবেশ করে। তারপর ইনসুলিন চিনিকে কোষগুলোতে পাঠিয়ে দেয়, যাতে তারা শক্তি পায়। কিন্তু একবারে বেশি চিনি খেয়ে ফেললে ইনসুলিন অতিরিক্ত চিনিকে চর্বি কোষে জমা রাখতে চেষ্টা করে। এর ফলে সময়ের আবর্তনে ওজন বেড়ে যায় অথবা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণে চিনি এড়িয়ে চলতে পারলে জটিলতার ঝুঁকি কমে যাবে। চিনির পরির্বতে সীমিত পরিমাণে মধু খেতে পারেন।
ট্রান্স ফ্যাট: খাবার উৎপাদকরা হাইড্রোজেনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি করেন। মূলত খাবারের মেয়াদ বাড়াতে চর্বিতে হাইড্রোজেন মিশিয়ে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি করা হয়। গবেষকদের মতে, ট্রান্স ফ্যাটের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। দৈনিক এক গ্রামের বেশি ট্রান্স খেলে প্রদাহ বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ইরিন কোটিস বলেন, ‘ট্রান্স ফ্যাট ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে ও উপকারী কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। উভয়ের প্রভাবে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।’ প্যাকেটের খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার বা বেকারির খাবারে কিছু না কিছু ট্রান্স ফ্যাট থাকে। তাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কুকিজ, প্যাস্ট্রিজ ও ক্রেকার্স অথবা বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট ও কেক না খাওয়াই ভালো।
প্রক্রিয়াজাত মাংস: গবেষকরা জানিয়েছেন, যেকোনো প্রক্রিয়াজাত মাংসই প্রদাহ-বর্ধক হতে পারে। স্বাদ বাড়াতে বা দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করতে মাংসকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়া করা হয়। এসব মাংস খেতে সুস্বাদু হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এসবের সঙ্গে প্রদাহের সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া লাল মাংসও প্রদাহ বাড়িয়ে থাকে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে প্রদাহ জনিত জটিলতার ঝুঁকি না বাড়াতে লাল মাংস সীমিত করুন ও প্রক্রিয়াজাত মাংস সম্পূর্ণ পরিহার করুন।
ওমেগা-৬: আমাদের শরীর ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডকে শক্তির জন্য ব্যবহার করে। শরীরে ওমেগা-৬ তৈরি হয় না, খাবার থেকে আসে। ডায়েটিশিয়ান কোটিস বলেন, ‘শরীরের স্বাভাবিক বিকাশসাধনের জন্য ওমেগা-৬ এর প্রয়োজন রয়েছে। এই পুষ্টি নিরাময় প্রক্রিয়ায়ও কিছু অবদান রাখে। কিন্তু গবেষণা বলছে যে অতিরিক্ত ওমেগা-৬ প্রদাহকে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে দিতে পারে।’ এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধতে পারে ও রক্তনালী সংকুচিত হতে পারে। করোনা রোগীদের রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোকও হতে পারে। হতে পারে পালমোনারি এম্বোলিজম অথবা হার্ট অ্যাটাকও। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণে ডায়েট থেকে ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ খাবার কমানোর চেষ্টা করুন, যেমন- ভুট্টা ও ভেজিটেবল অয়েল।
পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট: ডায়েটিশিয়ান কোটিস বলেন, ‘পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটে পুষ্টি ও আঁশ থাকে না বললেই চলে।’ সাধারণত সাদা ময়দার খাবারগুলোই পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, যেমন- পাউরুটি ও রোল, ক্রেকার্স বা বিস্কুট ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট শরীরকে প্রদাহিত করে। সংযোজিত চিনির মতো এগুলোও দ্রুত রক্তপ্রবাহে মিশে যায় ও রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। বাড়তি রক্ত শর্করা প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে- শরীর রক্ত থেকে বাড়তি শর্করা সরাতে চায় বলে প্রদাহ উদ্দীপ্ত হয়। অতএব কোভিড এর উপসর্গ থাকলে এখুনি ডায়েট থেকে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট সীমিত করার কথা ভাবতে পারেন।