এটা ঠিক যে পুষ্টির দিক বিবেচনায় সবুজ শাকসবজি অনন্য উপকার করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের খাবারও শরীরের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। কানাডার ডায়েটিশিয়ান সামারা ফেলেস্কি হান্ট বলেন, ‘ফাইটোকেমিক্যালস ফল ও শাকসবজিকে বিভিন্ন রঙের করে তোলে। এই রঞ্জক পদার্থ সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও দুরারোগ্য রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।’
এখানে স্বাস্থ্যের ওপর কোন রঙের খাবার কি প্রভাব ফেলে তা সম্পর্কে বলা হলো। এখানে রঙিন ফল ও শাকসবজি সম্পর্কে বলা হয়েছে, কৃত্রিম রঙ মেশানো খাবার নয়।
লাল রঙের খাবার: লাল রঙের ফল ও শাকসবজি থেকে অতি সুরক্ষামূলক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ইফেক্ট পাওয়া যায়। ফেলেস্কি বলেন, ‘লাল খাবারের ফাইটোকেমিক্যালস মানব শরীরে টিউমারের কার্যক্রমে বাধা দিতে পারে।’ টমেটো, তরমুজ, মোসাম্বি ও পেয়ারাতে ক্যানসার দমনকারী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লাইকোপিন রয়েছে। টমেটোরান্না করলে লাইকোপিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
লাল আপেল হলো কোয়ারসেটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কোষ-ধ্বংসাত্মক ফ্রি রেডিক্যালসকে চূর্ণবিচূর্ণ করে অকাল বয়স্কতা, হৃদরোগ ও ক্যানসার বিকাশে বাধা দেয়। লাল শালগম, লাল মুলা, লাল বাধাকপি, চেরি, স্ট্রবেরি, ক্রেনবেরি ও লাল আঙুরে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও ক্যানসার দমন করতে পারে। এছাড়া এটি রক্ত চলাচল বাড়ায়, রক্তচাপ কমায় ও ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
নীল রঙের খাবার: নীল ও পার্পল রঙের ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন। ফেলেস্কির মতে, বেরিতে সবচেয়ে বেশি অ্যান্থোসায়ানিন রয়েছে। যারা টিউমারের কার্যক্রমে বাধা দিতে চান তারা ডায়েটে বেশি করে ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, আকাই বেরি ও প্লাম রাখার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এছাড়া অ্যান্থোসায়ানিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে ও হৃদতন্ত্রকে প্লেক বা এলডিএল কোলেস্টেরল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। পার্পল রঙের আঙুরে সবচেয়ে বেশি রেসভেরাট্রোল পাওয়া যায়- এই প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ উপাদানটি বয়সজনিত রোগের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর।
কমলা ও হলুদ রঙের খাবার: ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ পেতে ডায়েটে কমলা ও হলুদ রঙের ফল-শাকসবজি রাখতে পারেন। হলুদ ক্যাপসিকাম, পেঁপে, কমলা, লেবু ও মোসাম্বিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। মিষ্টি আলু, গাজর ও মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। আমাদের শরীর বিটা ক্যারোটিনকে ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে। ভিটামিন এ ত্বককে সুস্থ রাখে, ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও চোখের রোগের ঝুঁকি কমায় (যেমন- ছানি ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশন)।
সবুজ রঙের খাবার: পালংশাক ও বাধাকপির মতো গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজিতে প্রচুর লুটেইন থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। ফেলেস্কি বলেন, ‘লুটেইন হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল যা বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি হ্রাস করে।’ সবুজ শাকসবজিতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলও প্রচুর মাত্রায় থাকে, যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন ও বি ভিটামিন। সন্তান সম্ভবা নারীদের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বি ভিটামিন হলো ফোলেট, যা গর্ভস্থ শিশুর মেরুদণ্ডের ত্রুটি প্রতিরোধ করতে পারে। ফোলেট বিষন্নতা ও হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।
সাদা রঙের খাবার: সাদা সবজি ও মসলা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ডায়েটে মাশরুম রাখতে পারেন। রসুন ও পেঁয়াজে উচ্চ মাত্রায় অ্যালিসিন থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট জীবাণু ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি কিছু ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। ফুলকপি ও মুলা থেকে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন সি ও ফোলেট পাবেন।