মহামারি করোনা সঙ্কটকালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি দায়িত্বশীল বাণিজ্যিক আচরণ ও অভিবাসী কর্মীদের জীবন-জীবিকা সুরক্ষায় মানবিকতা প্রদর্শনের জন্য উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
তিনি বলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের যে অর্জন তা এখন তীব্র ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের সময় নয়; এটি বৈশ্বিক সংহতিকে বহুগুণে বাড়ার সময়।
জাতিসংঘে চলমান উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামের (এইএলপিএফ) একটি সাইড ইভেন্টে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
‘দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা ও এগিয়ে নেওয়া: কোভিড-১৯ এর সঙ্কট মোকাবিলা’ শীর্ষক এই ভার্চ্যুয়াল সাইড ইভেন্টির আয়োজন করে কানাডা।
শনিবার (১১ জুলাই) জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার যে সাহসী, অটল, জন-কেন্দ্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে তার ফলেই বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকার গৃহীত দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলসমূহ যেমন ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারণ, আর্থিক প্রণোদনা, নারী ও যুব শিক্ষা, লিঙ্গসমতা, আইসিটি ও ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার, শক্তিশালী দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বিনির্মাণ ইত্যাদি সুধিজনদের সামনে তুলে ধরেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
ইভেন্টটিতে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’, ‘কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধার ও নতুন করে যাত্রা শুরু’, ‘এসডিজি-১: কোনো দারিদ্র্য নয়-এর অব্যাহত অগ্রগতি’ এসব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে কানাডার জাতীয় দারিদ্র্য উপদেষ্টা কাউন্সিল এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রাণবন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে যোগ দেন কানাডার শিশু, পরিবার ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হুসেন। তিনি বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন ও নাজুক উন্নয়নশীল দেশসমূহ যেমন এলডিসি ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য বিনির্মাণ এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মধ্যম সারির ব্যবসা উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রণালয়সমূহ ও বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কানাডা সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন পদক্ষেপসমূহ এই মহামারিতে ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে মর্মে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দারিদ্র্য বিমোচন।
উন্নয়নশীল দেশের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা, প্রতিকূলতা সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণ, এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোতে সহায়তা দিতে উন্নয়ন অংশীদার, বহুপাক্ষিক দাতাগোষ্ঠী, ও বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
বাংলাদেশের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচন সুরক্ষিত রাখতে এবং উত্তরণপূর্ব অবস্থায় ফিরে যাওয়া প্রতিরোধে আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ ও উদ্ভাবনী সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে অসমতা ব্যাপকতর হচ্ছে মর্মে উদ্বেগের কথা জানান কানাডার সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডেপুটি মিনিস্টার ক্যাথরিন অ্যাডাম।
তিনি এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। অনেক বক্তা তাদের বক্তব্যে বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত দারিদ্র বিমোচনে সফলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।