করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসানোর প্রস্তাব করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
শুক্রবার (১০ জুলাই) ১৪তম অনলাইন সভায় কমিটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে-কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ও মানোন্নয়নের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বাড়ানো বেশি প্রয়োজন। অটো-এক্সট্র্যাকশন মেশিশের সহযোগিতায় পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। বিভিন্ন পর্যায় থেকে দক্ষ জনশক্তিকে কোভিড-১৯ পরীক্ষাগারে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। পরবর্তিতে কোন স্থানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হলে সেই স্থানকে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া থেকে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত সময় কমানো প্রয়োজন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার তথ্য দেরিতে পৌঁছালে আইসোলেশন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর হয় না। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া সভায় আরও অনেক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
সভায় জানানো হয়, পরামর্শক কমিটির সদস্যসহ অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে ৫০ টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভিন্ন হাসপাতালে এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং আরও ১০০টি স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রস্তুতের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে সভায় আরও জানানো হয়, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কমিটির পরামর্শ থাকবে যে, ভ্যাকসিন প্রস্তুত অথবা আবিষ্কার অবশ্যই সরকার, বিএমআরসি ও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনক্রমে এবং ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে করতে হবে।
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জাতীয় পরামর্শক কমিটি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবন-যাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
পরামর্শক কমিটি ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরামর্শ দেয়। ঈদুল-আজহায় (কোরবানি ঈদে) পশুর হাট বসার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সুপারিশ করে যে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে যেন পশুর হাট স্থাপন না করা হয়। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন সাপেক্ষে কোরবানি পশুর হাট বসানো যেতে পারে। কোরবানি পশুর হাট স্থাপন ও পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ প্রয়োজন। কোরবানির পশুর হাট শহরের অভ্যন্তরে স্থাপন না করা। কোরবানি পশুর হাট খোলা ময়দানে হতে হবে, যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। বয়স্ক ব্যক্তি (৫০ বয়সোর্ধ্ব) এবং অসুস্থ ব্যক্তি পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। পশুর হাটে প্রবেশ ও বাহিরের পৃথক রাস্তা থাকতে হবে। পশুর হাটে আগমনকারী সব ব্যক্তির মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক। কোরবানি পশু জবাই বাড়িতে না করে শহরের বাহিরে সিটি করপোরেশনের দ্বারা নির্ধারিত স্থানে করতে হবে। অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ির বাহিরে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হলে, তা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধ এর ঈদের ছুটির সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।