টানা দু’এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলিসহ মূল সড়ক। কোথাও কোথাও সে পানি কোমর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। পাশাপাশি ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকলে নিজের অজান্তেই বিপদে পড়তে হয় পথচারীদের।
পরিত্রাণ পেতে প্রতি বছরই সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন রাজধানীবাসী। কিন্তু ‘বর্ষা মৌসুম’ পেরিয়ে গেলে ‘আশ্বাসে’ ভর করে এসব সমস্যা নিয়েই বছরের পর বছর পার করছেন নগরবাসী। এ অবস্থায় আবারও সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউক, জনপ্রতিনিধিদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি নিষ্কাশন চ্যানেলগুলোর মেইনটেনেন্স না করায় বৃষ্টি হলেই ডুবে যাচ্ছে ঢাকা।
সোমবারের (২০ জুলাই) বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, লালবাগ, জুরাইন, মতিঝিল, আরামবাগ, মৌচাক, পল্টন, ধানমন্ডি, মগবাজার, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, ফার্মগেট, খামারবাড়ী, আগারগাঁও তালতলা, মিরপুর-১০, ১১, কালশী, বনানী, বাড্ডা, খিলক্ষেতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাতে অনেক এলাকায় পানি নেমে গেলেও পুরান ঢাকার সিক্কাটুলিসহ কয়েকটি এলাকায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পানি জমে ছিল। এর মধ্যে এদিন সকালে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা রয়েই গেছে।
সিক্কাটুলির ছাতাওয়ালা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ও হোটেল ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ২০ থেকে ৩০ মিনিট বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে পানি উঠে যাওয়ায় হোটেল বন্ধ ছিল। এলাকার মানুষ খুব কষ্টে চলাচল করছে। প্রতি বছর হাজার হাজার টাকা ট্যাক্স দেই। কিন্তু ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজ করছে না।
সিদ্দিক বাজারের বাসিন্দা ওসমান বলেন, সোমবার সারাদিন এ এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল। হাঁটু সমান দূষিত পানি মাড়িয়েই এলাকাবাসী বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে। ড্রেনেজ মেইনটেনেন্স ঠিকমতো না করার কারণে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মেয়র আসে, মেয়র যায় কিন্তু পুরান ঢাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পায় না।
ফার্মগেটের রাজাবাজারের বাসিন্দা আসলামুল হক বলেন, সোমবার ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসার সামনের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে এই এলাকার ড্রেনেজ সংস্কার কাজ করতে দেখেছি। ড্রেনেজ সংস্কারের পর জলাবদ্ধতা কম হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো চিত্র দেখছি।
নগর বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে জনপ্রতিনিধিদের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকলে আজ নগরীর এ বেহাল দশা দেখতে হতো না। আমাদের গত বছরের গবেষণা অনুযায়ী, ড্রেনেজ লাইনগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে। অথচ দায়িত্বশীল সংস্থার তেমন তৎপরতা দেখি না। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন চ্যানেলগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এজন্য বৃষ্টি হলেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দিন দাবি করেন, টানা বৃষ্টিতে কুড়িল, উত্তরা-৪ ও ৬ নম্বর সেক্টরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি। অন্য যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে সেখানকার বেশকিছু পয়েন্টের উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল। এসব কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ মো. ইমদাদুল হক দাবি করেন, টানা বৃষ্টিতেও শান্তিনগর, সচিবালয়, জিপিও এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি। পুরান ঢাকাসহ অন্য যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে সেসব এলাকায় ড্রেনেজ উন্নয়নে কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে।
ঢাকা ওয়াসার পরিচালক প্রকৌশলী একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে জরুরি রেসপন্স টিম কাজ শুরু করেছে। রাজধানীর আশপাশের নদীতে জোয়ার থাকার কারণে পানি নামতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে।