মানিকগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে অভ্যন্তরীণ নদী কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও ইছামতির পানি বৃদ্ধিতে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
মাঠ, ঘাট, ডোবা, জলাশয় ডুবে পানি এখন বাড়ির উঠানে। জেলায় বন্যার পানিতে দুইশো একত্রিশ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে বন্যায় দৌলতপুর, হরিরামপুর, শিবালয় ও ঘিওরের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আঞ্চলিক পাকা সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
এসকল পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙা অংশে সাধারণ মানুষকে নৌকায় করে পার হতে হচ্ছে।
বাড়তি আয়ের আশায় এসব ভাঙা সড়ক পারাপারে নৌকা নিয়ে এসেছেন অনেকে। পিচঢালা সড়কগুলোর প্রতিটি ভাঙা অংশ যেন একেকটি নৌকার ঘাটে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে মাঝিরা এখানে ভিড় করছেন। এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা এখন এসব নৌকা দিয়ে পারাপার করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের বন্যার পানির তীব্র স্রোতে দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর থেকে আমতলী যাওয়ার পাকা সড়কের সমেতপুর এলাকা ভেঙে গেছে। এছাড়া, জিয়নপুর ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জ এলাকায় আধা কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, হরিরামপুর উপজেলায় পাটগ্রাম অংশে পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এ উপজেলায় পাকা সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ঘিওর এবং শিবালয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার আমতলী এলাকার রজ্জব আলী জানান, দৌলতপুর বাজারে বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হচ্ছে। তবে সমেতপুর এলাকায় পাক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ওই অংশে নৌকায় পারাপার হতে হয়।
হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকার ভৌমিক সরকার জানান, আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় যাতায়াত করা ছাড়া উপায় নেই। প্রতিটি পাকা সড়কের ডুবন্ত এবং ভাঙা অংশ পারাপারে নৌকার ঘাট তৈরি হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর এলাকার স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র মো. খলিল জানান, মঙ্গলবার (২১ জুলাই) হঠাৎ করে বাঘুটিয়া, বাঁচামারা, চরকাটারি যাওয়ার পাকা সড়কের সমতেপুর এলাকায় পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে যায়। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। বন্যার ভোগান্তি থাকার পরও বিভিন্ন প্রয়োজনে এখনো লোকজন যাতায়াত করছেন। তাই বাড়তি কিছু আয় করতে নৌকা নিয়ে খেয়া পার করতে এসেছি। এ অল্প একটু ভাঙা অংশে ৭ থেকে ৮ টি নৌকা খেয়া পারাপার করছে। তবুও লোকজন পারাপার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ জেলা এল.জি.ই.ডি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী একেএম আনিসুজ্জামান জানান, বন্যায় পানিতে ডুবে হরিরামপুর এবং দৌলতপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, দৌলতপুর উপজেলায় এখন পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের হিসেব তৈরি করা হবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।