নেত্রকোনার মদনে ট্রলার ডুবে ১৭ জন যাত্রী মারা গেছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। মৃত ব্যক্তিরা পৃথক দুটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজালিকান্দা হাওরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া এলাকায় মারকাসুন্না হাফিজিয়া মাদ্রাসার বেশ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গতকাল বুধবার সকালে নেত্রকোনার মদনের জামিয়া আজিজিয়া মঈনউল ইসলাম মাদ্রাসার আমন্ত্রণে বেড়াতে আসেন। পরে ওই দিন দুপুরে উভয় দুটি মাদ্রাসার অন্তত ৪৮ জন শিক্ষক শিক্ষার্থী মিলে মদনের উচিতপুর এলাকায় হাওর ভ্রমণে আসেন। তাঁরা একটি ট্রলারে (ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা) করে উচিতপুর থেকে গোবিন্দশ্রীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে রাজালিকান্দা হাওরে হঠাৎ করে প্রচÐ বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে ট্রলারটি ডুবে যায়। প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালায়। পরে স্থানীয় দমকল বাহিনী ও পুলিশ উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হয়। ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশগুলো সন্ধ্যায় থানা প্রাঙ্গণে এনে রাতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত সাড়ে সাতটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ দিকে, এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী, মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ তালুকদারসহ প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে নগদ সাত হাজার টাকা হস্তান্তর করা হয়।
নিহতরা হলেন ময়মনসিংহের কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও মারকাসুন্না হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাফুজুর রহমান (৪৫), তাঁর ছেলে মাদ্রাসার ছাত্র আসিফ মিয়া (১৫), মাহমুদ মিয়া (১২), ইসা মিয়া (৪৫), হেলাল উদ্দিনের ছেলে জাহিদ হাসান (২০), ওয়াজ উদ্দিনের মেয়ে লুবনা আক্তার (১০) ও জুলফা আক্তার (৭), মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম (১৬), সাইফুল ইসলাম (৩০), ফজর আলীর ছেলে জুবায়ের (২২), ইদ্রিস আলীর ছেলে হামিদুর ইসলাম (৩৫), আজাহারুল ইসলাম (৩৫), শফিকুর রহমান (৪০) ও তাঁর ছেলে সামান (১০), ইসা মিয়ার ছেলে শামিম হাসান (১০), ফজর আলীর ছেলে মুজাহিদ (১৭) ও তালেব হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪০)।
বেঁচে যাওয়া মাদ্রাসা শিক্ক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৫) বলেন, নৌকাটি হঠাৎ বাতাসে উল্টে যায়। তিনি নৌকার ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে সাঁতাতে থাকেন । এক পর্যায়ে দুর্বল হয়ে ডুবে যেতে থাকেন। এ সময় তাঁর শরীরের সুতির পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেলেন। পায়জামা খুরেল ফেলেন। আবার নতুন করে সাতরিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হন।
এ ব্যাপারে পুলিশ মো. আকবর আলী মুন্সী জানান, প্রায় ৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি ডুবে ছিল। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তির উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁদের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেকের পরিবারের কাছে দাফন বাবদ নগদ সাত হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।