নেত্রকোনা জেলার পর্যটন কেন্দ্র মদন উপজেলার উচিতপুরে প্রচন্ড ঢেউ ও বাতাসের কবলে পড়ে ট্রলির ডুবিতে যে ১৭ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫জনই ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরসিরতা ইউনিয়নের ভবানীপুর কোনাপাড়া, খরিচা ও গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। অপর দুইজন গৌরীপুর উপজেলার। রাকিব নামে নিখোজ একজনের বাড়ীও কোনাপাড়া গ্রামে। ওই কোনাপাড়া গ্রামের ‘মাদরাসায়ে মারকাযুস সুন্নাহ’র মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি সমিতির মাধ্যমে ১৯জন শিক্ষক ও দুইজন শিক্ষার্থীসহ তাদের পরিবারের ৪৮জন ছিলো।
এরা আত্ময়িতার সুবাদে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার উচিতপুরে জামিয়া আজিজিয়া মঈনউল ইসলাম মাদ্রাসার আমন্ত্রণে বেড়াতে আসেন। সেখানে বিনোদন পেতে হাওরের উদ্দেশ্যে ট্রলার ভ্রমনে গিয়ে এ দূর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হলো তাদের। এদিকে ট্রলার ডুবিতে ‘মাদরাসায়ে মারকাযুস সুন্নাহ’র মুহতামিম হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান, তার দুই ছেলে, দুই ভাতিজা ও দুই ভাতিজিসহ একই পরিবারের সাত জনের প্রাণ গেছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা বাসির উদ্দিনের ছেলে ও নাতিও মারা গেছে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে ওই গ্রামে নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। শুধু অপেক্ষা কখন মরদেহগুলো এবং সাতরে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো নিজ মাটিতে ফিরে আসবে।
সন্ধ্যায় সদরের ওই কোনাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। কেউ কেউ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ওই গ্রামের ঘরে ঘরে যেন কান্নার রোল। কেই কেউ লাশের অপেক্ষায় রাস্তায় পথ চেয়ে আছেন।
চরসিরতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছে লাশগুলো গ্রহন করেন এবং রাতেই মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান। তিনি জানান, সিরতা ইউনিয়নের ভবানিপুর কোনাপাড়া গ্রামের মাখরাজে সুন্না হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষের নেতৃত্বে ১৯জন শিক্ষক ও দুই ছাত্রসহ ওই গ্রামের ৪৮জনকে নিয়ে মদন উপজেলার উচিতপুরে একটি মাদ্রাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ট্রলারযোগে আনন্দ ভ্রমনের জন্য বেরিয়েছিলেন। কিছুদুর যেতেই ট্রলারটি ঝড়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়। এতে ওই গ্রামের ১৪ জনের মৃত্যু হয়। বাকী সাঁতরে পাড়ে ফিরেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজজ্জামান জানান, করোনার এই মহামারিতে ওই শিক্ষকদের ভ্রমন উচিত হয়নি। একসাথে এতগুলো মানুষের প্রাণ গেলো শুধুমাত্র তাদের খামখেয়ালিপনার কারনে।
নিহতরা হলেন- ‘মাদরাসায়ে মারকাজুস সুন্নাহ’র মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুর রহমান (৪৫), তার ছেলে হাফেজ মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৫) ও মাহমুদুর রহমান (১২), ভাতিজা কোনাপাড়া গ্রামের ফজর আলীর ছেলে জোবায়ের (২২) ও মুজাহিদ মিয়া (১৭), ভাগিনা একই গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম (১৬) ও মোবাইল ব্যবসায়ি জাহিদ (২০), চরখরিচা গ্রামের কৃষক ইসা মিয়া (৪০) ও তার ছেলে শামীম (১০), কোনাপাড়া গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে মাদরাসা শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম (৩৮), ইদ্রিস আলীর ছেলে মাদরাসা শিক্ষক হামিদুল (৩৫), আব্দুর রশিদের ছেলে মাদরাসা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রতন (৩০), লক্ষীপুর গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক জহিরুল ইসলাম (৩৫), কোনাপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মাদরাসা শিক্ষক রাকিব (২০) ও চরগোবিন্দপুরের তালেব মেম্বারের ছেলে শহিদুল (৪০) এবং গৌরীপুর উপজেলার ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে শফিকুর রহমান (৪০) ও তার ছেলে সামাআন (১০) রয়েছে। ###