ভাই, সারাজীবন দেখলাম রেললাইনে পাথর থাকে। লাইন যাতে দেবে না যায় সেজন্যই পাথর দিয়ে রেললাইন শক্ত রাখা হয়, সেটা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। অথচ ডিজিটাল যুগে লাইন সংস্কারে দেখছি বালি আর ইটের খোঁয়া। এটি কেম সংস্কার। মঙ্গলবার বিকেলে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ উসমান আলী ও শওকত হোসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ জংশনের আউটার সিগন্যাল থেকে কেওয়াটখালী লোকোসেড পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইন সংস্কারে পাথর না ফেলে এভাবেই বালু ও নি¤œমানের সুঁরকি ফেলে সংস্কার করা হচ্ছে। কোনো রকম তদারকি ছাড়াই কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুক ভাইরাল হলে নগরবাসীর মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে।
‘পাথরের বদলে ইটের সুঁরকি’ এমন খবরে বিকেলে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট আয়েশা হক ছুটে যান সংস্কার কাজ পরিদর্শনে কেওয়াটখালী। সেখানে বালি-সুঁরকি ফেলে লাইন সংস্কারের দৃশ্য দেখে উপস্থিত রেলওয়ে কর্তপক্ষ অর্থাৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলওয়ের উপ-সহকারি প্রকৌশলীর জিঞ্জাসনাবাদ করেন। এসময় তিনি সংস্কার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, সংস্কার ব্যয় ও ওয়ার্ক অর্ডার দেখাতে ব্যর্থ হয়। রেলওয়ের উপ-সহকারি প্রকৌশলীর কাজে দেখভাল করলেও এব্যাপারে কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট। আয়েশা হক যুগান্তরকে জানান, যেকোনো উন্নয়ন বা সংস্কার প্রকল্পে কাজের ধরণ নিয়ে সাইনবোর্ড লাগাতে হয়। কিন্তু রেলওয়ের এই সংস্কার কাজে কোনো সাইনবোর্ড নেই। এমনকি রেলওয়ের সহকারি প্রকৌশলী নাজমুল হাসানকে মোবাইল ফোনে সংস্কার প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়ে বিকেলের মধ্যে আসার নির্দেশ প্রদান করা হলেও তিনি আসেননি। এটি খুবই দু:খজনক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাথরের পরিবর্তে বালি ও নি¤œমানের সুঁরকি ফেলায় এতে রেললাইন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমীন কালাম বলেন, রেললাইন নির্মাণে ইটের খোয়ার পরিবর্তে পাথর ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে প্রতিবাদে কর্মসূচী দেয়া হবে। তথ্য নিয়ে লুকোচুরিতে মনে এখানে দুর্ণীতি আছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের মহানগর শাখার সাধারন আলী ইউসুফ জানান, রেললাইন সংস্কারের নামে এখানে সরকারি অর্থ অপচয় এবং পরিকল্পিত লুটপাট চলছে। এর সাথে জড়িতদের বিচার দাবী করেন তিনি।
রেলওয়ে ময়মনসিংহের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান জানান, রেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে টেন্ডারের মাধ্যমে সাময়িকভাবে সংস্কার রেললাইন সংস্কার করা হচ্ছে। লোকোসেডে বা রিলিফ ট্রেন যাতায়াতের জন্য লাইনটি দীর্ঘদিন ধরে এরপর লাইনের পাশ দিয়ে আরসিসি উঁচু রাস্তা হওয়ায় লাইনে পানি জমে লাইনটি আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাময়িকভাবে সাপোর্ট হিসেবে সুঁরকি দিয়ে লাইনটি সংস্কার করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ###