উবায়দুল হক
ময়মনসিংহ নগরের প্রাণকেন্দ্রে সার্কিট হাউস মাঠ। যার চারদিকটা ঘেরা সবুজ শ্যামলিয়ায়। রাজনীতি সচেতন এই ময়মনসিংহে সভা-সমাবেশের জন্য প্রধান পছন্দ এই মাঠটি। তেমনি সারাবছর খেলাধুলার ক্ষেত্রেও মাঠটি থাকে সরগরম। ঐতিহাসিক এই মাঠের পশ্চিম পাশে খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিংরুম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কয়েকদিন ধরে চলছে কাজও। তোলা হয়েছে দেয়ালের কিছু অংশ। তবে আকস্মিকভাবে মাঠের ভেতরে কংক্রিটের ড্রেসিংরুম নির্মাণকে ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে চলছে নির্মাণ কাজ। ১০-১২ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। যদিও জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, কাজ বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলম তার ক্ষমতাবলে ক্রীড়া সংস্থাকে ব্যবহার করে এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
এহতেশামুল আলমের দাবি, খেলাধুলার স্বার্থেই ড্রেসিংরুম স্থাপন করা হচ্ছে। এটি খেলোয়াড়সহ ক্লাব সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবি। ড্রেসিংরুমটি হলে এখানে জাতীয় পর্যায়েরও অনেক খেলাধুলা আয়োজন করা সম্ভব হবে। ড্রেসিংরুম নির্মাণে মাঠের বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
অন্যদিকে, এই ড্রেসিংরুম নির্মাণের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে মাঠের অনেক অংশ দখলদারদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। মাঠের ভেতরে কংক্রিটের ড্রেসিংরুম না করে মাঠের বাইরে নিষ্ক্রিয় ক্লাবঘরগুলো কিংবা ফাঁকা জায়গায় ড্রেসিংরুম করার দাবি তাদের।
এ বিষয়ে জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, যারা এই কাজটি করছে, তারা ঠিক করছে না। আমি মনে করি মাঠকে নষ্ট না করে মাঠের বাইরে যে ক্লাবগুলো রয়েছে সেখানে অনেক জায়গা রয়েছে সেখানে চাইলে ড্রেসিংরুমসহ খেলোয়াড়দের থাকার জায়গাও করতে পারে।
কবি ও সংগঠক শামীম আশরাফ বলেন, আমাদের শহরের প্রায় মাঠই যখন নাই হয়ে গেছে, তখন সার্কিট হাউস মাঠই গর্বিত অবলম্বন। যা শুধুমাত্র ক্রীড়ক না, লাখো মানুষের অস্তিত্বের বাহক। ড্রেসিংরুম করার মতো জায়গা অনেক রয়েছে। মাঠের ভিতরে স্থাপনার নামে কোন উন্নয়ন না হোক। উন্মুক্তভাবে আকাশ দেখুক প্রিয় সবুজ সার্কিট হাউস মাঠ।
সমাজকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, এমনিতেই চারপাশে সড়ক-ড্রেন এবং গাছ লাগিয়ে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মাঠের বড় একটা অংশ। এছাড়াও নানাভাবে মাঠ আরও দখল হয়েছে। এবার সার্কিট হাউস মাঠের ভিতরে খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিংরুম তৈরি করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। কাল হয়তো আরও অনেককিছু বানানোর তোড়জোড় শুরু হবে। সুতরাং কোনভাবেই এই উন্মুক্ত প্রান্তরে কোন স্থাপনা নির্মাণ জনগণ মেনে নিবে না। সার্কিট হাউস মাঠ শুধু মাঠ-ই নয়, ময়মনসিংহের সম্মান, ঐতিহ্য এবং প্রাণশক্তি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।##