রাজধানীর মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। থাকেন মেসে। পরিবার-পরিজন থাকে গ্রামের বাড়িতে। তার অফিস ছুটি হয়নি। নিয়মিত তাকে অফিসে যেতে হয়, যে কারণে মেসের অন্যরা বাড়িতে চলে গেলেও তিনি ঢাকায় আছেন কিন্তু পকেটে টাকা নেই।
গতরাতে ওই ব্যক্তি জানান, ঘরে যে খাবার আছে তা দিয়ে কোনোমতে রাতটা পার হবে। কাল কী হবে জানেন না। মোবাইলে টাকা নেই। বাড়িতে কী হচ্ছে, বাড়ির লোকজন কিভাবে চলছে তাও জানতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, মানুষের কাছে যে হাত পাতবেন তারও সুযোগ নেই। কোনোদিন তো কারো কাছে হাত পাতেননি। চাকরি করে যে টাকা উপার্জন হয়েছে তাই দিয়ে সংসার বেশভালোই চলেছে। কোনো সঞ্চিত টাকাও নেই, আবার ধারদেনাও নেই কিন্তু এবার তো আর নির্দিষ্ট দিনে বেতন হয়নি। যে কারণে দুর্ভোগ।
তিনি জানান, কবে বেতন হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা বলতে পারেন না। রাতে বাধ্য হয়ে তিনি একজনের কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়েছেন। তিনি জানান, এ টাকাটা না হলে সকালে না খেয়ে থাকতে হবে।
দিপ নামে একজন ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, শান্তিনগর দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একজন হাত বাড়িয়ে দেয়। গায়ের পোশাক আশাক এবং চেহারা দেখে মনে হয়নি হাতপাতার মতো মানুষ। হাত পেতে সাহায্য চাইলেন। বললেন, বাসায় স্ত্রী-সন্তানরা না খেয়ে আছে। ছোটখাটো ব্যবসা করেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। এখন হাত না পেতে কোনো উপায় নেই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ওয়ালে অসংখ্য মানুষ লিখেছেন মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ান। এরা না পারছেন হাত পাততে, না আছে ঘরে খাবার। সিদ্দিক নামে একজন লিখেছেন, মধ্যবিত্ত কয়েকজন তার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। আপতত এ লক্ষণটা তার কাছে কঠিন মনে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে তার আশঙ্কা।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সঙ্গে আছির প্রতিষ্ঠাতা জসিম উদ্দিন খান বলেন, গণ পরিবহনসহ সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তার সংগঠন মানুষকে সহায়তা দিয়ে আসছে। দু’দিন আগেও তা নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সীমিত ছিল। এখন মধ্যবিত্তদেরও অনেকের ফোন পাচ্ছেন। যারা লোক লজ্জায় মানুষের কাছে হাত পাততে পারছেন না কিন্তু ঠিকই অভাবের মধ্যে আছেন। আর পরিস্থিতি এমন হাত না পাতলেও তাদের পেট চলবে না।
একজন ফটো সাংবাদিক গতকাল বলেন, তারা প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাহায্য প্রার্থীদের ছবি তুলছেন কিন্তু প্রথম দিকের চেয়ে এখন চিত্র একটু পাল্টে যাচ্ছে। আগে নিম্নবিত্তরা হাত পাততেন, এখন মধ্যবিত্তদেরও অনেককে সহায়তার জন্য লাইনে দেখা যাচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী মোস্তফা সোহেল বলেন, পরিস্থিতি আস্তে আস্তে ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সাহায্যপ্রার্থীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এটা শঙ্কার বিষয়।