অমিত রায় :
ময়মনসিংহে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন ভর্তি ভর্তি হচ্ছেন এবং একই প্রায় একই হারে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছেন। চলতি জুলাই মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪ জন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন। মারা গেছেন ৪ জন। বর্তমানে মচিমহায় ভর্তি রয়েছে ৪ শিশুসহ ১১৫ জন। একজন রয়েছেন আইসিইউতে। অর্থাৎ সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯২ জন। ভর্তিকৃত ও সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরা সকলেই ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা হলেও ঢাকা, গাজীপুর, মাওনা বা তার আশপাশ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে এপর্যন্ত ৩৬২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে মচিমহায় ৩১৬ জন, কমিউনিটি বেইজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিবিএমসিবি) ৭ জন এবং বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৯ জন ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন দুইজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ৫ জন ও সিবিএমসিবিতে রয়েছেন ৫ জন রোগি।
জানা যায়, ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম রোগি ভর্তি হয় গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ সালে এবং সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেন ৩ জানুয়রি ২০২৩। শারমিন নামে ওই রোগির বাড়ী গফরগাঁও উপজেলায়। এরপর জুন মাস থেকে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বাড়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির। ভর্তিকৃতরা সকলেই ঢাকা, গাজীপুর, মাওনা বা তার আশপাশে আক্রান্ত হয়ে নিজ জেলা ময়মনসিংহে সুচিকিৎসার জন্য ছুটে আসছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. ফরহাদ হোসেন হীরা জানান, প্রতিদিন গড়ে নতুন রোগি ভর্তি হচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ জন। আর প্রতিদিন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছেন একই হারে। চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন চার জন। এদের মধ্যে ময়মনসিংহ সদর ও তারাকান্দার দুজন। বাকী দুজন নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের। তিনি জানান, ভর্তিকৃতরা সকলেই ঢাকা, গাজীপুর বা আশপাশের এলাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকার হাসপাতাল ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ।
ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আতংকের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য রোগিরা। চিকিৎসকরা জানান, ভর্তিকৃত রোগিরা মশারি ব্যবহারে অনিহা। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন জেলা, উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন থেকে ৩৩টি ওয়ার্ডে ফগার মেশিন দিয়ে এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড প্রয়োগ করা হলেও মশার উপদ্রুবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। অন্যদিকে ডেঙ্গু আতংক তো রয়েছেই। নগরবাসীর অভিযোগ ঔষধের কার্যকারিতা নেই।
জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, কোভিড মোকাবেলায় যেভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো, এখন ডেঙ্গু মোকাবেলায় সকল উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। তিনি জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এডিস মশার লার্ভার উৎসস্থল নষ্ট করতে নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান রাখার আহবান জানিয়েছেন। ##